• শাল-মহুয়ায় ঘেরা বাঁকুড়ার জঙ্গলে অভিনব ‘ইকো জিম’, এখানেই অনুশীলন আগামীর ‘অগ্নিবীর’-এর
    এই সময় | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সারি সারি শাল, মহুয়া গাছে ঘেরা জঙ্গল। সেখানে সূর্যের আলো পড়লে মোহময়ী রূপ। চারদিকে পিন পতনের নীরবতা, মাঝে মধ্যে ডেকে উঠছে কোনও পাখি। এমনই অসাধারণ পরিবেশে ‘ইকো জিম’ তৈরি করে নিয়মিত শারীরিক কসরত করেন সমরেশ গড়াই, সুজিত সেনরা। বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীর বলরামপুর গ্রামে বাড়ি তাঁদের। এখান থেকেই শরীর চর্চা করে সেনাবাহিনীর অগ্নিবীর প্রকল্পে সুযোগ পেয়েছেন জিৎ গড়াই। এই জিম ঘিরে এখন গ্রামের যুবকদের দু’চোখে স্বপ্নের আনাগোনা।

    এই জিমের একেবারে প্রথম দিন থেকেই যুক্ত ক্রীড়ানন্দ গড়াই। তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে এই ইকো জিম চলছে। উন্মুক্ত বাতাসে এটাই আদর্শ জায়গা শরীর চর্চার। নিয়মিত ৬০-৭০ জন আসেন এখানে। গ্রীষ্মকালে মেয়েরাও আসেন বলে জানান তিনি।

    কী নেই সেই জিমে। চিন আপ বার, ডন বার, রেসকিউ রোপ, ভারোত্তলনের সামগ্রী, ডাম্বেল, বারবেল-সহ নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধে দৌড়নোর ব্যবস্থা, সব মিলিয়ে জিমের যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও শরীরচর্চার সামগ্রী মজুত রয়েছে এখানে। সব থেকে বড় কথা, এগুলির কোনওটাই দোকান থেকে কেনা নয়। এলাকার মানুষের ফেলে দেওয়া বা বাতিলের তালিকায় থাকা জিনিসপত্র দিয়ে নিজেদের হাতে তৈরি করেছেন এখানকার যুবকরা।

    সুধাংশু গড়াইরা নিজে হাতে তৈরি করেছেন এই জিম। তিনি জানান, মূলত শরীর চর্চার জন্যই তাঁরা নিজেদের হাতে করে এই উন্মুক্ত জিম তৈরি করেছেন। এখানে শরীরচর্চা করে গ্রামের একাধিক যুবক সেনাবাহিনী ও পুলিশের চাকরির শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় আলাদা করে ট্রেনার রাখতে পারেননি তাঁরা।

    একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী মাঝে মধ্যে এখানে আসেন। এ ছাড়াও সেনাবাহিনীতে থাকা গ্রামের যুবকরা ছুটিতে এলে, কিছুটা সময় দেন এখানে। তবে বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়তে হয় তাঁদের। এলাকাটি হাতিপ্রবণ হওয়ায়, মাঝে মধ্যেই জিমের জিনিসপত্র হাতি ভেঙেও দেয় বলে জানান সুধাংশু।

    এখান থেকেই শরীর চর্চা করে সেনাবাহিনীর অগ্নিবীর প্রকল্পে সুযোগ পেয়েছেন জিৎ গড়াই। তার বাবা বরুণ গড়াই বলেন, ছেলে এখন প্রশিক্ষণ শেষে পুণেতে রয়েছেন। সাফল্যের প্রথম ধাপটা সোনামুখীর জঙ্গলের এই ইকো জিম থেকেই শুরু হয়েছিল।

    সুজিত সেন নামে এক যুবক বলেন, ‘এখান থেকেই শরীর চর্চা করে সেনাবাহিনী, পুলিশে চাকরি পেয়েছেন দু’জন। আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ স্থানীয় বাসিন্দা এবং সোনামুখী ব্লক তৃণমূল সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ বামাচরণ গরাইও বলছেন, ‘এলাকার যুব সম্প্রদায়কে পথ দেখাচ্ছে এই ইকো জিম। আমার নিজের বাড়ি এখানে। তাই জানি এখানে প্রতিকূলতাও অনেক। পানীয় জলের সমস্যা আছে, তা খুব তাড়াতাড়ি মেটাব। ব্যায়ামের সরঞ্জাম, শেডের পরিকল্পনাও রয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)