এই সময়, মালদা: লম্বায় ছ’ফুট। টানটান শরীর। সাদা ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি। স্টেজে উঠে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলতে শুরু করলেন–ডন কো পকড়না মুশকিল হি নেহি, না–মুমকিন হ্যায়। হঠাৎ করে চেনা সেই গলার স্বর, বাচন ভঙ্গি শুনে হাতের কাজ ফেলে অনেকে ছুট লাগালেন নওদাবাজারে। লোকটাকে বিশ্বের কে না চেনেন? গ্রামের সামাজিক অনুষ্ঠানে তবে কি অমিতাভ বচ্চন এসেছেন? হই হই কাণ্ড।
এলাকার আট থেকে আশি, হুমড়ি খেয়ে পড়ল অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে। ভিড় সামলাতে ছুটে আসতে হলো ইংরেজবাজার থানার পুলিশকে। তারা এসেও হতবাক। অমিতাভ বচ্চন তো নয়! মঞ্চে তবে কে? খানিকটা পরে জানা গেল তিনি শাহিদ রাজা। উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের বাসিন্দা।
ফের শুরু করলেন ডায়ালগ– হাম জাহাঁ খড়ে হোতে হ্যায়, লাইন ওহিসে শুরু হোতা হ্যায়। বিগ বি নন, তবু তাঁর মতো দেখতে, এটা কী কম! ভিড়ের জটলায় তখন গলার আওয়াজ আর চেহারা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। হাতের কাছে নকল অমিতাভকে দেখে তখন সিটি আর হাততালির বন্যা। যাঁকে ঘিরে রবিবার তোলপাড় অবস্থা, সেই শাহিদ শীতের দুপুরে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন, হাত নাড়লেন, শুধু সিনেমার ডায়লগ নয়, হিন্দি গানও করলেন।
রবিবার দুপুরে ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের নওদাবাজার এলাকার গরিব মানুষদের শীতবস্ত্র বিলির আয়োজন করেছিল তুতেপাড়া সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি সংস্থা। এ দিন এলাকার দুঃস্থদের শীতবস্ত্র বিলি করে তারা। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ–সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা।
তাঁদের অনেকেই নকল অমিতাভের সঙ্গে হাত মেলান। গ্রামের মানুষও হুমড়ি খেয়ে পড়েন। গ্রামবাসীদের এমন আবেগ দেখে কিছুটা হলেও হকচকিয়ে যান শাহিদ। তিনি বলেন, ‘মালদার এই গ্রামের সামাজিক কর্মসূচিতে এসে খুব ভালো লেগেছে। এত ভালবাসা পাব ভাবতেই পারিনি। আমারও গুরু অমিতাভ। অল্প বয়স থেকেই তাঁকে অনুসরণ করেই আমার পথ চলা।’
গ্রামের এমন অনুষ্ঠানে নকল অমিতাভ বচ্চন আসছেন, পরিষ্কার করে কাউকে কিছু বলেননি উদ্যোক্তারা। মাইকে সিনেমার ডায়লগ শুনে ছুটে আসেন অনেকে। তাদের একজন মহিউদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, ‘আসল গুরুকে তো কাছ থেকে কোনওদিনই দেখতে পাইনি, নকল গুরুকে দেখতে পেলাম। গলার আওয়াজে কিন্তু আসলে– নকলে যেন হুবহু মিল রয়েছে। আমার অনুরোধে হিন্দি সিনেমার গান করেছেন। যেমন দেখতে, তেমনি ভয়েস। কোনও কিছুতেই যেন খামতি নেই।’