• ‘দেখলেন তো সবটাই ভাওঁতা, মিথ্যা বেশিদিন চাপা থাকে না’, প্রায় এক বছর পর সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট মমতা...
    আজকাল | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভা ভোটের ঠিক আগের সময়কাল, বাংলার রাজনীতিতে তীব্র আকারে ধারণ করেছিল সন্দেশখালি-ইস্যু। কেউ কেউ সন্দেশখালির সঙ্গে ভোটের আগে নন্দীগ্রাম কিংবা সিঙ্গুরের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। বিজেপি-সিপিএম ওই ইস্যুকে আঁকড়ে ধরে ভোটের আগে রাজনীতির জলঘোলা করতেও পিছপা হয়নি। মাঝে ওই লোকসভা নির্বাচনেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। তবে সেই গোটা সময়কাল সুচারু ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন যিনি, ঘটনার প্রায় একবছর পর তিনি আজ সন্দেশখালিতে। মনে করালেন, সন্দেশখালির কথা তিনি ভুলে যাননি এক মুহূর্তও। তাঁর কয়েক মিনিটের বক্তব্যে বুঝিয়ে দিলেন, রাজনীতিতে কেন তিনি এই মুহূর্তে অপ্রতিরোধ্য। সন্দেশখালি থেকে ভোট, যে কোনও ইস্যুতে, যেন বুঝিয়ে দিলেন, কোন সময়ে চুপ করে দেখতে হয়, আর কখন গিয়ে বলতে হয়, শিখতে হবে তাঁর থেকেই। 

    রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সোমবার প্রশাসনিক বৈঠক করতে হাজির হয়েছেন সেখানে। তার আগে, রবিবার থেকেই এলাকায় প্রশাসনিক তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হাওড়ার ডুমুরজলা থেকে সোমবার বেলায় হেলিকপ্টারে রওনা দেন তিনি। দুপুর ১টা নাগাদ সন্দেশখালির মিশন মাঠে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সন্দেশখালির মঞ্চ থেকে এদিন ২০ হাজার মানুষের কাছে সরকারি প্রকল্প পোঁছে যাওয়ার কথা বললেন। রাজ্য সরকারের সরকারি প্রকল্পগুলি আরও একবার বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলেন জনগনের সামনে, খতিয়ান দিলেন প্রকল্পের প্রাপকদের। মনে করালেন, ‘যতদিন বাঁচবেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার পৌঁছে যাবে মা-বোনেদের কাছে। মায়েদের জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয় লক্ষ্মীর ভান্ডার।‘ সন্দেশখালির মানুষের জন্য এদিন একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা বলেন তিনি। মঞ্চ থেকেই জানান, সন্দেশখালির গ্রামীণ ৩০ শয্যার হাসপাতাল, এবার থেকে ৬০ শয্যার হবে। সন্দেশখালি যেন পিছিয়ে না থাকে, সেকথাও মনে করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এলাকার উন্নতির জন্য গ্রহণ করতে হবে পদক্ষেপ। প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার টাকা নেয় না, সেকথাও এদিন মনে করিয়ে দিলেন মমতা, বললেন প্রকল্পের নামে কেউ টাকা চাইলে, না দিতে। জাতি শংসাপত্র যাঁদের সত্যি দরকার, তাঁরা পাবেন। সন্দেশখালিতে জেটিঘাটের উন্নতি হবে, লঞ্চ-স্পিডবোটের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও ঘোষণা করেনে এদিন।

    তারপরেই তাঁর মুখে উঠে এল সন্দেশখালি-ইস্যু, যে ইস্যু ভোটের আগে তোলপাড় করেছিল গোটা রাজ্যকে। তার প্রায় একবছরের মাথায় শাসক দলের সুপ্রিমো দলের বিপুল জয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি জানি এখানে অনেক টাকার খেলা হয়েছে, পরে দেখলেন তো সবটাই ভাওঁতা। মিথ্যা বেশিদিন চলে না।‘ মমতা এদিন অভিভাবকের মতোই বললে, ‘যা হয়েছে হয়েছে, আমার মনে নেই। আমি ভুলে গিয়েছি। আমি মনে রাখতে চাই সন্দেশখালির ছেলেরা-মেয়েরা এক নম্বর স্থানে আসুক। তাঁরা ভারতে একনম্বর হোক, বিশ্ব জয় করুক। তারা এগিয়ে চলুক।‘ সন্দেশখালির যে কোন ঘটনায় যে তাঁর নজর সর্বক্ষণ, সেকথা বোঝাতেই বললেন, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাঁখায় কোনও ঘটনা ঘোটলে এক সেকেন্ডের মধ্যে তাঁর কানে পৌঁছবে সে কথা। বলেন, ‘আমি সকাল থেকে রাত মানুষের পাহারাদারের কাজ করি। আপনারা সুস্থ থাকলে, ভাল থাকলে আমি ভালো থাকি, আমার মন ভালো থাকে।‘

    সন্দেশখালি ইস্যু উঠতেই, একই সঙ্গে কটাক্ষে বিদ্ধ করলেন রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল বাম-বিজেপিকে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, বিজেপির অনেক টাকা আছে। আর সেই টাকা অন্যায়ের। তীব্র কটাক্ষ করলেন বামেদের। বলেন, ‘যে বামফ্রন্ট সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করে গিয়েছে মানুষের উপরে, তারা আমাদের খুন করতে দ্বিধাবোধ করেনি। তাঁরা আজকে হঠাৎ বড় বড় কথা বলতে শুরু করেছেন।‘
  • Link to this news (আজকাল)