এক সময় নৌসেনায় ছিলেন। এখন অবসর নিয়ে গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে, হাতে অক্সিমিটার নিয়ে ঘুরে বেড়ান ৭২ বছরের ‘তরুণ’ মলয় বসু। থাকেন ব্যারাকপুরে। তবে মানুষের রক্তচাপ আর অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপতে কখনও চলে যান ক্যানিং, বনগাঁ, কৃষ্ণনগর, বেথুয়াডহরি। আবার কখনও বর্ধমান, হুগলি। গলায় স্টেথো, হাতে অক্সিমিটার, ঘুরে ঘুরে লোকের প্রেসার মেপে বেড়ান ৭২-এর মলয়সকাল-বিকাল ঘুরে ঘুরে এ কাজই করে বেড়ান তিনি। মলয় বসুর বক্তব্য, ‘ঘরে বসে না থেকে, কিছু কাজও করা হয়।’ আবার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যেগুলি কার্যত থ্রেট, সেগুলি নিয়ে সচেতনও করা হয়।
সাদা চুল, ফ্রেঞ্চ কাট সাদা দাঁড়ি, মাথায় টুপি, গলায় মাফলার। ক্রস করে একটি ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ান মলয় বসু। ওই ঝুলিতেই যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মানুষের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন, নিজের স্বাস্থ্যও ভালো রাখেন,গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে রক্তচাপ মেপে বেড়ান তিনি। উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে বাড়ি হলেও অনেক দিন ধরেই ব্যারাকপুরে থাকেন তিনি। হুগলি সদর চুঁচুড়ায় মাঝে মধ্যেই দেখা যায় তাঁকে স্টেথোস্কোপ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে।
নিজেই জানালেন, নৌসেনায় ছিলেন। সেখানে চাকরির প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি ও নার্সিং সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ১৫ বছর চাকরি করার পর ১৯৮৮ সালে অবসর নেন। এর পর সৌদি আরবে কয়েক বছর চাকরি করে দেশে ফেরেন। সেই থেকেই এ ভাবে মানুষের ব্লাড প্রেশার মেপে বেড়ান।
মলয় বসু জানান, রক্তচাপের ওঠানামায় শরীরের অনেক কিছু বদলে যায়। কিন্তু নিয়মিত হয়ত ডাক্তারখানা বা ওষুধের দোকানে গিয়ে প্রেশার মাপা হয় না। তাই তিনি নিজেই পৌঁছে যান মানুষের দুয়ারে। কারও যদি প্রেশার কম দেখেন, জানিয়ে দেন অবশ্যই যেন একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। দিনে মোটামুটি ৫-৬ ঘণ্টা এই কাজ করেন। ৫০-৬০ জনের প্রেসার মাপেন।
পেনশন রয়েছে তাঁর। তবু এ কাজ করেন ভালোবেসে। ছেলে, বউও উৎসাহ দেন বলে জানান মলয়বাবু। বিজ্ঞান আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং শ্রমজীবী স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য এই কাজ তিনি বেছে নিয়েছেন বলে জানান। আয়ের তিন ভাগের দু’ভাগ দান করেন সেই কাজেই। সন্ধ্যাবেলা চুঁচুড়ায় নিয়মিত দেখা মেলে তাঁর। দেখা যায় এ দোকান, ও দোকান ঘুরে ব্যবসায়ীদের ব্লাড প্রেশার মাপছেন। ব্যবসায়ীরাও জানান, অনেক সময় কাজের চাপে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় না। মলয়বাবু এলে সুবিধাই হয়।