সদস্য সংগ্রহে নগদ পুরস্কার পদ্ম বিধায়কের ঘোষণায় ক্ষোভ
বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া কেন্দ্রে পর্যুদস্ত হওয়ার পর বিজেপির সংগঠনে ধস নেমেছে। জেতা আসনে দলের শোচনীয় পরাজয়ের হতাশায় কর্মীদের অনেকেই বসে পড়েছেন। এই অবস্থায় সদস্য সংগ্রহে বিধায়কের নগদ পুরস্কারের ঘোষণা সক্রিয় বিজেপি কর্মীদের মনোবল আরও ভেঙে দেবে বলেই নেতারা মনে করছেন। উল্লেখ্য, বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা সম্প্রতি ঘোষণা করেন, ৭৫ জন সদস্য সংগ্রহ করলে বুথ সভাপতিদের ১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। নীলদ্রিশেখর দানারসেই ঘোষণার পর জেলার নেতারা দলের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন। বুথ সভাপতিদের একাংশও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। দলের কাছে তাঁরাও পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন। যদিও বিধায়কের কোপে পড়ার আশঙ্কায় বুথ সভাপতিরা প্রকাশ্যে এনিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বুথ সভাপতি বলেন, লোকসভা ভোটে হারের পর থেকে বাঁকুড়ায় সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। কর্মীদের একাংশ বসে গিয়েছে। কেউ আবার তৃণমূলে চলে যাচ্ছে। আমরা কর্মীদের বুঝিয়ে দলে রাখার চেষ্টা করছি। এই পরিস্থিতিতে বিধায়কের টাকা বিলিয়ে সদস্য সংগ্রহের‘টোপ’ দেওয়ার বিষয়টি আমরা ভালো চোখে দেখছি না। এতে সংগঠনের হাঁড়ির হাল সবার সামনে বেআব্রু হয়ে গেল। এরপর কর্মীদের আটকে রাখা মুশকিল হবে। দল বিধায়কের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে আমরা অন্যরকম চিন্তাভাবনা করব।
নীলাদ্রিবাবু অবশ্য নিজের বক্তব্যে এখনও অনড় রয়েছেন। শনিবার বাঁকুড়া শহরের ভৈরবস্থান মোড়ে নিজের দোকানে বসে বিধায়ক বলেন, ভালো কাজের জন্য আমি বুথ সভাপতিদের পুরস্কৃত করতেই পারি। আমি তো আর কর্মীদের চুরি করতে বলছি না। ওই পোস্ট আমি দলের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে করেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেই কেউ তা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করেছে। তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, পরপর নির্বাচনে ভরাডুবির পর একদা শক্ত ঘাঁটি জঙ্গলমহলে বিজেপি কার্যত ধুঁকছে। দফায় দফায় বৈঠক করেও জেলা নেতৃত্ব সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি আনতে পারছে না। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ধাক্কা খাচ্ছে গেরুয়া শিবির। সময়সীমা বাড়িয়েও সাফল্য মিলছে না। এখনও পর্যন্ত ৭০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা গিয়েছে বলে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল স্বীকার করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি সংস্থার মতো বিধায়কদের দলের তরফে সদস্য সংগ্রহের ‘টার্গেট’ দেওয়া হয় বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। নিজের বিধানসভা এলাকায় সেই টার্গেট পূরণের জন্যই নীলাদ্রিবাবু বুথ সভাপতিদের নগদ পুরস্কার দেওয়ার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। তারপরই বিজেপির অন্দরে শোরগোল পড়ে যায়। জেলার রাজনৈতিক মহলেও যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
বিজেপিকে কটাক্ষ করে বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী বলেন, রাজ্য সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে গৃহবধুদের সম্মানের সঙ্গে মাসে হাজার টাকা দিচ্ছে। সেখানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ৭৫ জন সদস্য সংগ্রহ করে বিজেপি বুথ সভাপতিদের মাত্র ১০০ টাকা দেবে! এই অবিচার মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে ‘পারিশ্রমিক’ বৃদ্ধির দাবিতে বিজেপির বুথ সভাপতিদের আন্দোলনে নামা উচিত। অরূপবাবু মুচকি হেসে আরও বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে বিজেপি কর্মীদের জন্য মাসোহারার ব্যবস্থা করার আর্জি জানাব।