• বিজেপি বধে‘গোকুলে’ বৃদ্ধি বিদ্রোহীদের, পালাবদলের ইঙ্গিত নন্দীগ্রামে
    বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নন্দীগ্রাম: ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’। নন্দীগ্রামের গোকুলনগর পঞ্চায়েতের বিজেপি নেতৃত্ব একযোগে দলছাড়ার কথা জানানোর পরই এই লাইন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অর্থাৎ গোকুলনগরের বিদ্রোহীদের হাত ধরে নন্দীগ্রামের মাটিতে বিজেপির সর্বনাশের সূচনা হচ্ছে। ঘোষণার পর ২৪ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে থাকার বার্তা দিচ্ছেন সোনাচূড়া থেকে কালীনগর, আমদাবাদ-১ ও ২গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নির্বাচিত সদস্যদের একাংশ। ভাঙনের আঁচ কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে, সেটা আন্দাজ করে রবিবার রাতেই গোকুলনগরে হাজির হন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয়নি। সোমবারই হাতেনাতে তার প্রমাণ মিলেছে। এদিন কোরামের অভাবে গোকুলনগর পঞ্চায়েতে সাধারণ সভার মিটিং ভেস্তে গিয়েছে।

    গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫০লক্ষ টাকা দুর্নীতি নিয়ে দলের মধ্যে বিভাজন ঘটেছিল। দলের সিংহভাগ সদস্য এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু, পার্টি দুর্নীতিগ্রস্তদের পক্ষে থাকায় সংঘাত প্রকট হয়। বিদ্রোহীদের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা বাড়তে থাকে। শেষমেশ দল ছাড়ার মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে, গোকুলনগরের দেবাশিস দাস, অশোক করণের এই লড়াইকে কুর্ণিস জানাচ্ছেন সোনাচূড়া এবং কালীচরণপুরের বিজেপি নেতা-কর্মীদের অনেকেই। তাঁরাও দলে গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার হয়ে কোণঠাসা। এই অবস্থায় দেবাশিসবাবু, অশোকবাবুদের লড়াই তাঁদের অক্সিজেন দিচ্ছে।

    ২০২৩ সালে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের দিন তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীকে ভাঙিয়ে আমদাবাদ-২ পঞ্চায়েত দখল করেছিল বিজেপি। দলবদলের পুরস্কার হিসেবে প্রধান হন পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল। সেই গ্রাম পঞ্চায়েতে এখন বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে। বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার জন্য পা বাড়িয়ে আছেন কয়েকজন। একইভাবে দলবদলের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে আমদাবাদ-১ পঞ্চায়েতেও। যদিও ওই গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সোনাচূড়াকে বধ্যভূমি বানিয়ে রেখেছে বিজেপি। অন্য দলের কর্মসূচি নেওয়াই ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সোনাচূড়াতেও বিজেপির কোন্দল তুঙ্গে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ আছে বলে দেবাশিসবাবু জানান। 

    নতুন বছরের গোড়ায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে সভা করতে পারেন। সেই সভায় বিজেপি ছেড়ে আসা নেতৃত্বের হাতে জোড়াফুলের পতাকা তুলে দেওয়া হবে বলে খবর। ভোটে টাই হওয়া নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা খোয়ানোর পথে বিজেপি। একইভাবে নন্দীগ্রামের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির রাশ আলগা করাই লক্ষ্য তৃণমূলের। পঞ্চায়েতের আইন অনুযায়ী, বোর্ড গঠনের আড়াই বছর পর বোর্ডের বিরুদ্ধে আনাস্থা আনা যায়। দলবদলের হিড়িকে তার আগেই নন্দীগ্রামে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে কর্তৃত্ব খোয়াতে পারে বিজেপি।

    নন্দীগ্রাম-১পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা বিজেপি ছেড়ে দেওয়া দেবাশিস দাস বলেন, নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লকে চার-পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে বিজেপির সদস্যরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ২০২০সালের পর এই প্রথম নন্দীগ্রামে এতবড় ধাক্কার মুখোমুখি হবে বিজেপি। ভাঙন ধরতে পারে নন্দীগ্রাম লাগোয়া খেজুরিতেও। সেখানকার বারাতলা, জাহানাবাদ এলাকার বিজেপি নেতৃত্বের একটা অংশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

    বিজেপির জেলা সভানেত্রী তথা হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বলেন, নন্দীগ্রামে আমাদের নির্বাচিত সদস্যদের দল ছাড়ার গুঞ্জন ঠিক নয়। আমার কাছে এধরনের কোনও খবর নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)