সংবাদদাতা, সিউড়ি: এ জেলায় পথ দেখিয়েছিল রাজনগর। তাকে সামনে রেখেই আরও ২১টি রাস্তা নির্মাণে বর্জ্য প্লাস্টিক ব্যবহারের উদ্যোগ নিচ্ছে বীরভূম জেলা পরিষদ। এজন্য খরচ হবে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্লকের গ্রামীণ রাস্তা ওই ভাবে সংস্কার হবে। ইতিমধ্যেই রাস্তাগুলির সংস্কারের জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন পাঠিয়েছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের দাবি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সেই অনুমোদন মিলবে। তখনই শুরু হবে টেন্ডার প্রক্রিয়া।
উল্লেখ্য, কয়েকমাস আগেই বীরভূমের রাজনগর ব্লকের চন্দ্রপুরে বর্জ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণ হয়। সেটি ছিল এই জেলায় প্রথম প্লাস্টিক ও পিচ মিশ্রিত ‘নীল রাস্তা’। রাজনগরের চন্দ্রপুর থেকে গামারকুণ্ডু পর্যন্ত এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই সাফল্যের পর এবার জেলার অন্যান্য ব্লকেও এই ধরনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পরিষদ। বীরভূম জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৭টি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় মোট ২১টি রাস্তা এভাবে নির্মাণ করা হবে। রাস্তাগুলি নির্মাণের ক্ষেত্রে পিচের সঙ্গে বর্জ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করা হবে। এই ২১টি রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮২ কিলোমিটার।
জেলার সিউড়ি-১ ব্লকের ভুরকুনা পঞ্চায়েতের অমৃতপুর জাতীয় সড়কের কাছ থেকে মল্লিকপুর হয়ে মানিকপুর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিমি রাস্তা, সিউড়ি-২ ব্লকের হাটজন বাজার থেকে বনসঙ্কা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিমি রাস্তা, সাঁইথিয়া ব্লকের গরগরিয়া থেকে কামারশাল রোড পর্যন্ত প্রায় ১০ কিমি রাস্তা ওইভাবে সংস্কার করা হবে। নানুর ব্লকের নানুর থেকে বনগাছত্র বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ১৪কিমি রাস্তা, লাভপুর ব্লকের বিরাম মন্দির থেকে আদিত্যপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৭কিমি রাস্তা, রামপুরহাট-১ ব্লকের আখিড়া থেকে বৈধরা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিমি রাস্তা, রাজনগর ব্লকের জয়পুর থেকে আলিগড় রোড পর্যন্ত প্রায় ৯কিমি রাস্তা, মুরারই-২ ব্লকের পাইকর থেকে কনকপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিমি রাস্তা, খয়রাশোলের নওয়াপাড়া থেকে বাতাসপুর প্রায় সাড়ে সাত কিমি রাস্তা সহ জেলার মোট ১৭টি ব্লকে এই রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, এমনিতেই জেলাজুড়ে প্লাস্টিক দূরীকরণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের আওতায় রাস্তার নির্মিত পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক মেশানো হচ্ছে। দু’টো বিষয় মাথায় রেখে এই ধরনের রাস্তার কথা ভাবা হচ্ছে। একদিকে, কম খরচে টেকসই রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি, নীল রংয়ের রাস্তায় সৌন্দর্যায়নের বিষয়টিও রয়েছে। তাছাড়া গরম পিচে যদি ১০ শতাংশ পর্যন্ত বর্জ্য প্লাস্টিক দেওয়া হয়, এর কোনও বিক্রিয়া হয় না। গরম পিচে ১০ শতাংশ প্লাস্টিক মিশিয়ে দিলে রাস্তাটি সাধারণত ঠান্ডা থাকে। হাঁটার জন্য উপযুক্ত হয়। জলে এই পিচ ক্ষয় অনেক কম হয়। প্রচণ্ড গরমেও এর কোনও ক্ষতি হয় না। রাস্তার পিচ সাধারণত জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে জলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাটা অনেকাংশে কমে যায়। তার ফলে রাস্তা টেকসই হয়।
বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ বলেন, এর আগে এই ধরনের একটি রাস্তা জেলায় তৈরি হয়েছে। তাই সেই ভাবেই আরও কিছু রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য জেলার বিভিন্ন ব্লকের ২১টি রাস্তা তৈরির প্রস্তাব রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই অনুমোদন আসবে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।