বাঘিনী জিনাত ধরা পড়তেই আতঙ্ক উধাও, নতুন বর্ষবরণে বান্দোয়ানমুখী পর্যটকরা
বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: জিনাতের আতঙ্কে মাটি হয়ে গিয়েছিল বড়দিনের আনন্দ। ভরা মরশুমেও পর্যটক শূন্য ছিল পুরুলিয়ার বান্দোয়ান। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তবে জিনাত ফিরতেই সেই আতঙ্ক দূর হয়েছে। ১ জানুয়ারি বান্দোয়ানে রেকর্ড পর্যটক সমাগমের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, জিনাতের আগমনই হয়তো ভাগ্য খুলে দেবে বান্দোয়ানের পর্যটনের।
গত ২০ ডিসেম্বর থেকেই বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়াতে থাকে জিনাত। বাঘিনি আতঙ্কে কাঁটা হয়ে ছিলেন পর্যটকরা। জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় কড়া নজরদারি শুরু করে বনদপ্তর। জঙ্গলে প্রবেশের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, নিষিদ্ধ করা হয় বনভোজনও। বাঘের পেটে যাওয়ার ভয়ে পর্যটকরাও জঙ্গল থেকে দূরে ছিলেন। গত ২৫ ডিসেম্বরও পর্যটকরা বান্দোয়ানমুখী হননি। তবে, জিনাত ধরা পড়তেই ফের পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। রাত পোহালেই পয়লা জানুয়ারি। তারপরেও যতদিন শীত রয়েছে, ততদিন পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। পুরুলিয়ার কংসবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, বাঘিনির আতঙ্ক দূর হয়েছে। এবার আর পর্যটকদের আসতে কোনও বাধা নেই।
পুরুলিয়ার পর্যটন বলতে অযোধ্যার নামই প্রথম মাথায় আসে ভ্রমণপিপাসুদের। অযোধ্যা সার্কিট ছাড়াও রঘুনাথপুর মহকুমায় রয়েছে বড়ন্তি, জয়চণ্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট। তবে, গত কয়েক বছর ধরেই অফবিট ট্যুরিজমের নয়া ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান সার্কিট। এককালে মাওবাদীদের দাপাদাপিতে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছিল এই এলাকা। তবে ধীরে ধীরে মাও আতঙ্ক কাটিয়ে আবারও পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে বান্দোয়ানের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে। তবে, পর্যটন ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে যেভাবে অযোধ্যাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেই গুরুত্ব যদি বান্দোয়ানকে দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো আজ বান্দোয়ানও অন্য জায়গায় পৌঁছে যেত। দুয়ারসিনি ছাড়া বান্দোয়ানকে পর্যটকদের কাছে সেভাবে তুলেই ধরা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রসূন দে বলেন, বান্দোয়ানের যে রাইকা পাহাড়ে জিনাত লুকিয়ে ছিল, সেই রাইকা এতদিন সেইভাবে কেউ আবিষ্কারই করেনি। বান্দোয়ানের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় এই রাইকাই। সেখানে যেমন ট্রেকিং করা যায়, তেমনই পাহাড়ী পাকদণ্ডী বেয়ে বাইক নিয়েও ওঠা যায়। তাঁর কথায়, বাইক রাইডারদের অফ রোডিংয়ের স্বর্গ হল বান্দোয়ান। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এমন সব রাস্তা রয়েছে, যা পুরুলিয়ার অন্য কোথাও নেই। বান্দোয়ানেই রয়েছে ঘোরাটিকা লেক, বুড়িঝোড় ঝর্ণা। বিভিন্ন টিলায় বেশ কিছু গুহা রয়েছে। যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লুকিয়ে থাকতেন। টিলার উপর থেকে বান্দোয়ানের অপরূপ সৌন্দর্য যে একবার দেখবে, সে বারবার দেখতে ছুটে আসবে।