• নাম বদলে স্টার এখন ‘বিনোদিনী থিয়েটার’
    বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় নামবদল হল শহরের অন্যতম হেরিটেজ স্টার থিয়েটারের। নতুন নাম হয়েছে, ‘বিনোদিনী থিয়েটার’। সোমবার সন্দেশখালিতে সরকারি পরিষেবা প্রদানের কর্মসূচির মঞ্চ থেকে এ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি নতুন বছর আসছে। মা-বোনেদের সম্মান জানিয়ে স্টার থিয়েটারকে বিনোদিনী থিয়েটার নামে বদল করা হয়েছে। এ বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’

    হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারের সঙ্গে ঊনবিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় অভিনেত্রী নটী বিনোদিনীর যোগ রয়েছে। স্টার নামটি পরিবর্তন করে মুখ্যমন্ত্রী বিনোদিনীকে যোগ্য সম্মান দিলেন বলে মনে করছেন বর্তমান সময়ের শিল্পী, কলাকুশলীরা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই তৎপর হয়ে ওঠে কলকাতা পুরসভা। তড়িঘড়ি নাম বদলের নির্দেশিকা জারি করে পুর-সচিবালয়। এদিন সন্ধ্যাতেই পুরনো বোর্ড নামিয়ে ফেলা হয়। তার বদলে প্রথমে নীল-সাদা রঙের ‘বিনোদিনী থিয়েটার’ নামাঙ্কিত ফ্লেক্স লাগানো হয়। পরে রাতের দিকে বসানো হয় ‘গ্লোসাইন বোর্ড’।  পুরসভার হেরিটেজ বিভাগের এক কর্তা বলেন, যখন প্রথম এই মঞ্চ তৈরি হয়, তাঁর নামেই এই থিয়েটারের নামকরণের দাবি ওঠে। কিন্তু তৎকালীন উচ্চবর্ণরা বাইজির নামে থিয়েটার মঞ্চের নামকরণ নিয়ে আপত্তি তোলেন। যেহেতু বিনোদিনী নিজেই থিয়েটারের ‘নক্ষত্র’, তাই তাঁর নামের বদলে ‘স্টার’ নাম দেওয়া হয় নয়া থিয়েটারের। এত বছর পর সেই ‘ভুল’ শুধরানো হল বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।

    অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন সিনেমা-থিয়েটার জগতের ব্যাক্তিত্বরা। আগামী বছর রামকমল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বিনোদিনী’ মুক্তি পেতে চলেছে বড়পর্দায়। মুখ্য ভূমিকায় রুক্মিণী মৈত্র। অভিনেত্রীর কথায়, ‘অনেকদিন আগেই এই সম্মান তাঁর পাওনা ছিল। এর জন্য আমাদের দিদি, মুখ্যমন্ত্রীর ধন্যবাদ প্রাপ্য। ২০১৯ সালে বিনোদিনীর চিত্রনাট্য শুনেছিলাম। তখন থেকেই একটাই কথা ভেবে এসেছি, এই দিনটি কবে আসবে। খবর শোনামাত্র কেঁদে ফেলেছিলাম। ছবির প্রিমিয়ার বিনোদিনী মঞ্চেই হবে।’ এই খবরে উচ্ছ্বসিত রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর প্রতিক্রিয়া, হাতিবাগান স্টার থিয়েটারের নতুন নাম বিনোদিনী থিয়েটার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলা রঙ্গমঞ্চের ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। যদিও মাত্র ২৫ বছর বয়সে প্রবল অভিমানে মঞ্চাভিনয় ছেড়ে দেন তিনি। কারণটি রসজ্ঞ বাঙালি মাত্রই জানেন-আমার লেখা ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘অদামৃতকথা’ উপন্যাসে লেখা আছে বিশদে। শ্রীরামকৃষ্ণের স্নেহধন্যা বিনোদিনী শান্তি পেলেন আজ। তাঁকে প্রণাম। প্রণাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।’

    শুধু অভিনেত্রী ছিলেন না বিনোদিনী। অসাধারণ কাব্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর একটি কবিতার খণ্ডাংশ-‘তৃষিত চাতকী প্রাণ কাতর রহিল/জীবন শুকাল তবু বারি না মিলিল/নবীন নীরদ পানে চাহিত তৃষিত প্রাণে/এই আশা ছিল মনে বুঝি বারি পাব/জানি না জগতে আমি এরূপে শুকাব...।’
  • Link to this news (বর্তমান)