এ বার কি আরজি কর–তদন্তের নজর সংস্কার শুরু হওয়া সেই ঘরের দিকে? ইঙ্গিত খানিক তেমনটাই। নেপথ্যে দু’টি রিপোর্ট। যে দুই রিপোর্টে উঠে আসা তথ্যকে ঠিক এক সূত্রে গাঁথা যাচ্ছে না।
গত ৯ অগস্ট আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে দু’টি কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দল রিপোর্ট দিয়েছে সিবিআই-কে। নির্যাতিতার প্রতিরোধের প্রশ্নে এই দুই রিপোর্ট যা জানাচ্ছে, তাতে অকুস্থল ঘিরে ধন্দ বাড়ছে। যেমন, মাল্টি ইনস্টিটিউশনাল মেডিক্যাল বোর্ড (এমআইএমবি)-এর রিপোর্টে মৃত্যুর আগে অভিযুক্তের শরীরে ধস্তাধস্তি–প্রতিরোধের চিহ্ন স্পষ্ট।
আবার, সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, চারতলার সেমিনার রুমে, যেখান থেকে নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার হয়, সেখানে কার্পেট বা ঘরের আশপাশে প্রতিরোধের কোনও চিহ্ন মেলেনি। এখানেই দেখা দিয়েছে প্রশ্ন — নির্যাতিতা কি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, নাকি সেটুকুও করতে পারেননি? সেই সঙ্গেই অকুস্থল ঘিরে রহস্য জোরালো হয়েছে।
দুই রিপোর্ট মিলিয়ে সিবিআই–গোয়েন্দাদের সন্দেহ — তা হলে কি সেমিনার রুমের আশপাশেই ঘটেছিল আসল অপরাধ? এই সূত্রেই সন্দেহের তির ঘুরে যাচ্ছে সেমিনার রুমের অদূরের ওই ঘরের দিকে, যেখানে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মাথায়, গত ১১ অগস্ট তৎপরতার সঙ্গে চালু হয়েছিল সংস্কারের কাজ। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের আগাগোড়া অভিযোগ ছিল, আদতে তথ্যপ্রমাণ গায়েবের জন্যই তথাকথিত ক্রাইম সিনের অদূরে এই সংস্কারের কাজ শুরু হয়। এখন সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও।
সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এমআইএমবি-র বিশেষজ্ঞরা সাফ জানিয়েছেন, অভিযুক্তের শরীরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন মিলেছে মানে, নির্যাতিতা যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু সিএফএসএল রিপোর্ট বলছে, নির্যাতিতার দেহ যে কার্পেটে ছিল, সেখানে তাঁর মাথা ও তলপেটের নীচে থাকা কার্পেটে রক্তের দাগ ছাড়া কিছু মেলেনি। ঘরের কোথাও রক্ত কিংবা দেহরস মেলেনি, কার্পেটের রোঁয়ায় ধস্তাধস্তির চিহ্নও অমিল।
এই দুই তথ্য মিলিয়ে তদন্তকারীরা মনে করছেন যে, অপরাধ অন্যত্র ঘটিয়ে সেমিনার রুমে দেহ রেখে দেওয়ার হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সেটা সেমিনার রুমের আশপাশে বলে কেন সন্দেহ করছেন তাঁরা। সূত্রের বক্তব্য, প্রথমে মনে করা হয়েছিল, হাসপাতালের ক্যাজ়ুয়াল্টি ব্লকের ওই ভবনেরই আটতলার অর্থোপেডিক ওটি-র উল্টো দিকের ঘরে আসল অপরাধ ঘটিয়ে থাকতে পারে অভিযুক্ত। ওই ঘরটি সাময়িক সিলও করে দেয় সিবিআই।
কিন্তু আরজি করে মাঝরাতেও থাকে ব্যস্ততা। এমন একটি হাসপাতালে আটতলায় অপরাধ ঘটিয়ে সকলের চোখের আড়ালে চারতলায় দেহ স্থানান্তর বাস্তবে সম্ভব নয় বলে বোঝা যায় পরে। এই কারণেই চারতলায় সেমিনার রুমের অদূরে থাকা সংস্কার শুরু হওয়া ওই ঘর ঘিরে সন্দেহ জোরদার হচ্ছে। সেখানে িনর্মাণকাজ শুরু হয়েছিল প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের নির্দেশে। এই সূত্রে উঠছে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার প্রসঙ্গও। যে সন্দেহ জোরদার হচ্ছে গত ১৪ অগস্ট হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘিরে।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা এ প্রসঙ্গে আবার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্যের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার না–করার অভিযোগেও সরব। চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চের সদস্যদের বক্তব্য, ঘটনার দিন ভোর ৩টে ৬ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড থেকে ৩টে ৩২ মিনিট ৯ সেকেন্ডের মধ্যে ওই সেমিনার রুমের দিকে চার জনকে যেতে দেখা গিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয়েরই পরিচয় জানা গিয়েছে।
এর পরে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু বাকি তিন জনের কী পরিচয়, কেনই বা তাঁরা ঘটনার সময়ে সেখানে গিয়েছিলেন, সে সব খতিয়ে দেখা হয়নি এখনও। ফলে প্রশ্ন থেকেই যায়, ওই তিন জনের কারও সঙ্গে সঞ্জয়ের যোগ ছিল না তো?