এই সময়: বর্ষবরণের রাতে শহর জুড়ে হুল্লোড়–পার্টি। থাকবে খানা–পিনা এবং ডিজে। সমাজ মাধ্যমে এমনই এক পার্টির ইনভিটেশন কার্ড দেখে খানিকটা কৌতুহলী জনতা। ডিজে হিসেবে সেখানে থাকছে কলকাতার ট্রাফিক পুলিশের স্পেশাল পারফরম্যান্স! সেই পার্টিতে ফ্রি–এন্ট্রি থাকছে পাঁচ ধরনের লোকের।
প্রচন্ড গতিতে যাঁরা গাড়ি চালান, মদ্যপ চালক, ট্রাফিক সিগন্যাল ভাঙা চালক, হেলমেট–ছাড়া বাইক চালক এবং অন্য অফেন্ডারের নাম থাকছে সেই তালিকায় । এটুকু পড়েই সকলে বুঝে গিয়েছেন, কলকাতা পুলিশের এ এক অভিনব উদ্যোগ। খানিকটা রসিকতা করে, খানিকটা ব্যাঙ্গের সুরেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে আইনভঙ্গকারীদের।
বলা হয়েছে, পার্টির স্থান — গোটা কলকাতা। সময় — সারা রাত। শেষে লেখা — চেষ্টা করবেন যাতে আপনাকে আমাদের অতিথি না–হতে হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র একটা রাতের। রাত পোহালেই ‘নিউ ইয়ার’। সোমবার থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে ওই অভিনব ইনভিটেশন কার্ড। নতুন বছরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তাতেও নজর দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। চলতি বছরে এ রাজ্য থেকে একের পর এক জঙ্গি গ্রেপ্তারের পরে সতর্কতা অনেকটাই বেড়েছে। বাড়ছে নজরদারিও।
জানা গিয়েছে, বর্ষবরণের রাতে শহর জুড়ে প্রায় ৪৫০০ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকছে। লালবাজার সূত্রে খবর, তার মধ্যে পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকাতেই থাকবে ২৫০০। তাঁদের সঙ্গে রাস্তায় বছরশেষের রাত কাটাবেন এক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, দু’জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ১২ জন ডেপুটি কমিশনার এবং ২৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। শুধু পার্ক স্ট্রিট ও তৎ–সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন থাকবেন ৭০ জন ইন্সপেক্টর। থাকছে ১১টি ওয়াচ টাওয়ার, ১৫টি পুলিশ রেসপন্স বুথ।
আজ বছরের শেষ দিনে এবং কাল নতুন বছরের শুরুতে ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা, শপিংমল, সিনেমা হল, নিউ মার্কেট, সাউথ সিটি মল–সহ শহরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকছে।
সম্প্রতি সমস্ত মেট্রোর যাত্রাপথ বাড়িয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। মেট্রোতে ভিড় হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। মেট্রোর যাত্রীদের চাপ সামলাতে থাকছে অতিরিক্ত পুলিশি নজরদারি। শহরের সমস্ত এন্ট্রি–এগজ়িট পয়েন্টে নাকা চেকিং জোরদার করতে কলকাতা পুলিশের সমস্ত ট্রাফিক গার্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সন্দেহজনক গাড়ি দেখলে তার ডিকি খুলে চেক করতে হবে বলে নির্দেশ এসেছে।
বৈধ কাগজপত্র রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। থাকছে পুলিশ পিকেটিং, কুইক রেসপন্স টিম, পিসিআর ভ্যান, মহিলা পুলিশ এবং হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। কলকাতার মার্কুইজ় স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট–সহ হোটেলগুলিতে রেজিস্টার চেক করা হবে কলকাতা পুলিশের তরফে।
কারণ, পুলিশ কর্তাদের অভিযোগ, সম্প্রতি এই রাজ্যে ও দেশের অন্যত্র যে জঙ্গিরা ধরা পড়েছে, তাদের বেশিরভাগ আধার কার্ডে ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কোনও না কোনও জায়গার নাম। এই সব অনুপ্রবেশকারীরা কলকাতায় এসে থাকার জন্য শহরের কেন্দ্রস্থলে ওই সব এলাকার হোটেলগুলিই বেছে নিয়েছে বলে দাবি পুলিশকর্তাদের।