• মা-মেয়ের কফিনবন্দি দেহ, অ্যাম্বুল্যান্সে ফিরছেন বাবা
    এই সময় | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, নিউ ব্যারাকপুর: সিকিমে ঘুরতে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন ফিরে এসে ধুমধাম করে সরস্বতী পুজো করবেন বাড়িতে। সেই ইচ্ছে আর পূরণ হলো না। উত্তর সিকিমে বেড়াতে গিয়ে খাদে গাড়ি পড়ে মারা গিয়েছেন নিউ ব্যারাকপুরের শোভন শাসমলের স্ত্রী এবং আড়াই বছরের মেয়ে। ময়নাতদন্তের পর সোমবার রাতেই মেয়ে–বৌ কফিনবন্দি হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গোটা শরীরেই চোট–আঘাত নিয়ে মঙ্গলবার অ্যাম্বুল্যান্সে ফিরবেন শোভন শাসমল।

    শোভন গৃহশিক্ষকতা করতেন। সেই টাকাতেই সংসার চলত। স্ত্রী পায়েল ও আড়াই বছরের মেয়ে শ্রীনিকাকে নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর উত্তর সিকিম বেড়াতে গিয়েছেন। সঙ্গে গিয়েছিল শোভনের মামাতো ভাইয়ের পরিবারও। ছ’জনে গাড়িতে করে শনিবার জুলুকে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গাড়ির পিছনের দিকে ছিলেন শোভন ও তাঁর পরিবার।

    জুলুক দেখে রোলেপ যাওয়ার পথে লামাটেনের কাছে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। গাড়ি খাদে গিয়ে পড়ে। শ্রীনিকা তখন মায়ের কোলে। খাদে পড়ার মুহূর্তে একরত্তিকে বাঁচাতে পায়েল কোল থেকে মেয়েকে ফেলে দিয়েছিলেন। শ্রীনিকা খাদে পড়লেও গভীরে গিয়ে পড়েনি। কিন্তু পায়েল খাদের অনেকটাই নীচে গিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। শ্রীনিকা উদ্ধারের পরেও বেঁচেছিল।

    কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। শোভন গুরুতর জখম হয়েছেন। গাড়ির মাঝে থাকা শোভনের মামাতো ভাই ও তাঁর স্ত্রীও চোট পেয়েছেন। তাদের বাচ্চাকে গাড়ি খাদে পড়ার মুহূর্তে জানলা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলায় সে বেচে গিয়েছে।

    ও দিকে রবিবার বিকেলে পিয়ালি ও শ্রীনিকার দেহের ময়নাতদন্ত হয়ে যায়। রাতেই কফিনবন্দি হয়ে বাগডোগরা দেহ বাড়িতে ফেরে। আহত শোভন এখনও ফেরেননি। তাই স্ত্রী–কন্যার শেষকৃত্য এখনও করা হয়নি। দেহ দু’টি রাখা হয়েছে নিউ ব্যারাকপুরের পিস হাভেনে। মঙ্গলবার অ্যাম্বুলেন্সে শোভন–সহ বাকি আহত ফিরবেন নিউ ব্যারাকপুরে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শোভন শেষবারের জন্য স্ত্রী ও মেয়ের মুখটা দেখতে চেয়েছেন। শোভনের বন্ধু বিকাশ সিনহা বলেন, ‘ওর স্ত্রীর মুখটা যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে সেই মুখ দেখবে। সেটা আর বলতে পারিনি ওকে।’

    শোভনের মা পিয়ালি শাসমল বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। একমাত্র নাতনির জন্য এ বছর বাড়িতে ধুমধাম করে সরস্বতী পুজোর কথা ছিল। কিন্তু নাতনিই তো আর রইল না।’ দুর্ঘটনার আগের দিন শুক্রবার শোভন বাড়িতে ফোন করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, বাবার শরীর কেমন আছে। পিয়ালির সঙ্গেও কথা হয়েছিল শাশুড়ির।

    শোভনের বাবা প্রতাপ দেবনাথ পক্ষাঘাতে বিছানায় শয্যাশায়ী। কথাও এখন অস্পষ্ট। তবু তারই মধ্যে তিনি বলে উঠলেন, ‘বেড়াতে যাওয়ার জন্য আমি কখনও ছেলে–বৌমাকে নিষেধ করিনি। কিন্তু সেই বেড়াতে যাওয়াই কাল হলো।

  • Link to this news (এই সময়)