সুজিত রায়, আলিপুরদুয়ার
ভারত–ভুটান সীমান্তে আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম। আর পাঁচটা ব্লকের মতো কুমারগ্রামেও রয়েছে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু এলাকার মানুষ তার নাম দিয়েছেন ‘রেফার হাসপাতাল’। কারণ, চিকিৎসক ও ওষুধপত্রের অভাব তো রয়েছেই। এর উপর যোগ হয়েছে সামান্য অসুখেই রোগীদের জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্নিশের চাঙড় ভেঙে পড়েছে। জরাজীর্ণ ঘর। চিকিৎসক মাত্র দু’জন। স্বাস্থ্যকর্মীও কম। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একাধিক জায়গার ভগ্নদশা। পাশাপাশি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে চিকিৎসকের চেম্বার। ছাদের বেশ কিছু অংশ খসে পড়ছে। তা সত্ত্বেও হেলদোল নেই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিন জন চিকিৎসক রয়েছেন। দু’জন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক এবং একজন হোমিওপ্যাথিক। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা অন্তর একজন করে চিকিৎসক থাকার কথা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই তা হয় না। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক আবার কামাখ্যাগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চারদিন ডিউটি করেন। ফলে এই প্রত্যন্ত ভারত-ভুটান সীমান্ত ঘেঁষা এলাকার রোগীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও।
বিষয়টি তিনি বিধানসভায় তুলবেন বলে জানিয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেন, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জনের বেশি চিকিৎসক থাকেন না। কর্মীর সংখ্যা কম। বিষয়টি স্বাস্থ্যভবন জানে। আমাদের কিছু করার নেই।’
কুমারগ্রাম ব্লকে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় দু’লক্ষ মানুষের ভরসা এই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ভুটানের কালীখোলা থেকেও রোগী এখানে আসেন। কুমারগ্রাম থেকে আলিপুরদুয়ারের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নেই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা। রাতে কোনও অসুস্থ রোগীকে এতটা পথ নিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কোনও অন্তঃসত্ত্বার প্রসব বেদনা উঠলে তাঁকে যদি রেফার করে দেওয়া হয়, তাহলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা অথৈ জলে পড়েন। এখানে সাধারণ ভাবে কুকুরে কামড়ানোর ভ্যকসিনও থাকে না। স্থানীয় বাসিন্দা প্রেমানন্দ দাস বলেন, ‘শুধু নামেই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ডাক্তার নেই। এখানে কোনও রোগী নিয়ে এলে তাঁকে শুধু রেফার করে দেওয়া হয় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে।’
সংকোশ বনবস্তির বাসিন্দা কিরণ ছেত্রী বলেন, ‘কোনও অভিযোগ করলেই হাসপাতাল কর্মীদের সাফ কথা,আপনার নার্সিংহোমে যান। এই চা বলয়ের একমাত্র ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র জোড়াতালি দিয়ে চলছে। না আছে চিকিৎসক, না আছে পর্যাপ্ত ওষুধ। কোনও কঠিন অসুখ হলেই চা শ্রমিকদের অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে।’ স্থানীয় বাসিন্দারা তিন বার জেলাশাসক এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সুষ্ঠু স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারপরও কোনও কাজ হয়নি।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বড়াইকের বাড়ি কুমারগ্রামের নিউল্যান্ডস চা বাগানে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকার চা বাগানে ক্রেশ ও হাসপাতাল তৈরি করেছে। তাতে শ্রমিকদের সমস্যা মিটছে। কুমারগ্রাম ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে আমি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব। আরও চিকিৎসক নিয়োগ করা যায় কি না, তা দেখব।’ কুমারগ্রাম ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ‘রেফার’ তকমা কবে ঘোচে, এখন সেটাই দেখার।