• জাল পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্র ছড়িয়ে দেশের নানা শহরে
    এই সময় | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • কারা করে? কাদের জন্য? কাস্টমার শুধুই বাংলাদেশিরা? কেন বাইরে থেকে এ দেশেই আসতে হচ্ছে এমন কাজের জন্য?

    জাল পাসপোর্ট নিয়ে আমজনতার মনে এখন এমনই প্রশ্নমালা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট বলছে, দেশজুড়েই চলছে জাল পাসপোর্ট চক্রের রমরমা। বাংলাদেশ তো বটেই, নেপাল, মিয়ানমার এমনকী আফগানিস্তানের নাগরিকরাও এ দেশে এসে জাল পাসপোর্ট তৈরি করাচ্ছেন। কেন? তাঁদের দেশে পাসপোর্ট মেলে না? গোয়েন্দারা বলছেন, যাঁরা নিজেদের দেশে কোনও ভাবেই পাসপোর্ট পাবেন না, তাঁরাই চোরাপথে ভারতে ঢুকে এই জাল পাসপোর্ট করিয়ে নিচ্ছেন।

    সম্প্রতি বিভিন্ন শহর থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ এমন পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। কলকাতার পাশাপাশি নয়ডা, দিল্লি, চেন্নাই, পুনে — জাল পাসপোর্ট চক্র রয়েছে নানা শহরে। সে সব জায়গায় ভাড়া নেওয়া রয়েছে বাড়িও, যাতে ভেরিফিকেশনের সময়ে আবেদনকারীরা সেখানে থাকতে পারেন।

    গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশে বহু নাগরিকের নামে সে দেশে অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। তাই তাঁরা কেউই সেখানে পাসপোর্ট পাবেন না। তাঁরাই অনেকে দালাল ধরে এ দেশ থেকে পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করেন। আবার ওভার স্টে বা কোনও অপরাধের জন্য এক শ্রেণির ব্যক্তি বিভিন্ন দেশে ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে যান। ফলে তাঁরা নিজেদের দেশের অরিজিনাল পাসপোর্টের মাধ্যমে সেই সব দেশে আর প্রবেশাধিকার পান না। তাঁদেরও অনেকে চোরাপথে এ দেশে ঢুকে জাল ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। দিল্লি হোক বা কলকাতা, বেশ কিছু চক্র বিদেশে কাজ জোগাড় থেকে শুরু করে জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট–ভিসা তৈরি করা কাজ করে মাথাপিছু এক–দেড় লক্ষ টাকায়।

    কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুযায়ী কলকাতার পাশপাশি দিল্লি, নয়ডা, চেন্নাই, পুনে, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের শহরে এমন হাজারো চক্র কাজ করছে। গত কয়েক মাসে দিল্লি পুলিশ জাল পাসপোর্ট চক্রের ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশি, ২৩ জন দালাল। এর বাইরে ৬ জন নেপালের নাগরিক। ১২ ডিসেম্বর চেন্নাই পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের থেকে উদ্ধার হয় ৫৫টি জাল পাসপোর্ট।

    কলকাতা পুলিশের হাতে ধৃত জাল পাসপোর্ট চক্রের চাঁই মনোজ গুপ্তার স্টাইলে চেন্নাইয়েও ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে দু’টি জাল পাসপোর্ট চক্র সক্রিয় ছিল। সম্প্রতি নয়ডা পুলিশের কাছে পাসপোর্টের নথি যাচাই এবং ঠিকানা ভেরিফিকেশনের জন্য দু’টি নথি আসে। দু’টিরই ঠিকানা এক।

    ওই ঠিকানায় পৌঁছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কনস্টেবল বুঝতে পারেন সেখানে তিনি আগেও এসেছেন ভেরিফিকেশনের জন্য। এর পরে তদন্তে উঠে আসে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই কারবার চালিয়ে আসছে। তারাই ওই বাড়ি ভাড়ায় নিয়ে রেখেছে। ঘটনার মূল অভিযুক্ত দিল্লিতে একটি জনসেবা কেন্দ্র চালান। তাঁর অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ৫০০টি পাসপোর্টের আবেদনপত্রের নথি মেলে। যাঁদের বেশির ভাগ পাসপোর্ট পেয়েও গিয়েছেন। গত বছর সিবিআই জানতে পারে, নেপাল এবং মিয়ানমার থেকে গ্যাংটক, শিলিগুড়ি এসেও অনেকে জাল পাসপোর্ট বানিয়েছেন।

  • Link to this news (এই সময়)