বিজেপি এলে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে এ কথা ঘোষণা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা-নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার সন্দেশখালিতে সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই সন্দেশখালিতে পৌঁছে যান শুভেন্দু। মমতা যেখানে সভা করেছিলেন, মঙ্গলবার তার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি মাঠে সভা করেন শুভেন্দু। সেখান থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকে একযোগে নিশানা করেন তিনি। শুভেন্দুর প্রতিশ্রুতি, ‘বিজেপিকে আনুন। ঘরের জন্য ৩ লক্ষ টাকা দেব। সঙ্গে সৌর আলো, শৌচালয়, পানীয় জলও দেবো।’ আবাসে রাজ্যের টাকার পরিমান নিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়েননি তিনি।
সম্প্রতি প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে ইতিমধ্যেই দিয়েছে রাজ্য সরকার। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রের বঞ্চনার পরেও রাজ্য আবাসের টাকা দিয়েছে। মানুষ আরও বেশি করে এই সরকারের উপর ভরসা করছে। গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় তৃণমূলের ভিত আরও মজবুত হয়েছে। আর টাকার লোভ দেখিয়ে বিজেপি অন্য কৌশল নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘বিজেপি যে সব রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, সেখানকার মানুষকে আগে এই টাকা দিয়ে দেখাক! পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যা পাচ্ছে এতেই খুশি।’
২০২৪-এর আগে পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অনুষঙ্গে উঠে আসতো সন্দেশখালির নাম। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে এই দ্বীপাঞ্চলের পরিচিতিটাই পুরোপুরি বদলে গেল। সে দিনই ইডির অভিযান চলেছিল সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে। তার পর ইডি আধিকারিকদের মারধর, হেনস্থা থেকে পরে নানা নির্যাতনের ছবি সামনে আসে। তৃণমূল-বিজেপির তাল ঠোকাঠুকি চলে বহুদিন। কিছু ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। তার পর ইছামতি নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। লোকসভা ভোটে এই ঘটনা প্রভাবই ফেলেনি বলা যায়।
বছরের শেষলগ্নেও শিরোনামে রইল সন্দেশখালি। পর পর দু’দিন হাই ভোল্টেজ সভা সেখানে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর মঙ্গলবারই পৌঁছে যান শুভেন্দু অধিকারী। বারবারই এ দিন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে ‘হিন্দু জাগরণ’-এর কথা।
শুভেন্দুর দাবি, ‘লোকসভায় আপনারা ৭ হাজার লিড দিয়েছেন। বিধানসভায় ২৭ হাজার লিড চাই। সন্দেশখালি তো জিতবই। হিন্দু প্রধান, তপশিলি প্রধান হিঙ্গলগঞ্জ, বসিরহাট দক্ষিণও জিতব। যেখানে হিন্দু বেশি, সে সিট মমতাকে দেবো না।’ এ রাজ্যে বিজেপির সরকার হলে সন্দেশখালির ঘটনায় কমিশন বসবে বলেও জানান তিনি।
বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর এখনও এই লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়নি। সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর ভবিষ্যদ্বাণী, এ বার বসিরহাটে বিজেপিরই সাংসদ হবে। একই সঙ্গে শুভেন্দু শুনিয়ে রাখেন, প্রয়াত সাংসদের মনোনয়ন ত্রুটিপূর্ণ ছিল। রেখা পাত্র হাইকোর্টে এ নিয়ে মামলাও করেছেন। শুভেন্দুর কথায়, ‘রেখার মামলায় কয়েক দিন আগেই শুনানি ছিল। রাজ্য সরকার হলফনামা জমা দিতে গিয়েছিল। হলফনামা বাতিল করে বিচারপতি কোর্টে ক্ষমা চাইয়েছেন। পরের ডেট ১৫ জানুয়ারি। নিশ্চিন্তে থাকুন, সাংসদ বিজেপিরই হবে।’ শুভেন্দুর বিশ্বাস, সন্দেশখালি যে পথ দেখিয়েছে, আগামিদিনে পশ্চিমবঙ্গ সে পথেই হাঁটবে।