• মৈত্রীর বার্তা নিয়ে ভারতের মঞ্চে ও পারের শিল্প লোকশিল্পী সাজু
    এই সময় | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • বাসুদেব ভট্টাচার্য, চ্যাংড়াবান্ধা

    সঙ্গীতের কোনও কাঁটাতার হয় না৷ সুর সীমান্ত মানে না। সীমান্তের দু’পারে যখনই কোনও উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন শিল্পী জগতের মানুষকে গানের মাধ্যমে শান্তির পথে নিয়ে যান। সোমবার ভারতে এসে এমন কথাই বললেন বাংলাদেশের বিখ্যাত লোকশিল্পী সাজু আহমেদ। লাটাগুড়ি ফোক ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে যোগ দিতে সোমবার ভারতে এসেছেন তিনি। গানে গানে শান্তি ছড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে ভারতে পা রেখেছেন সাজু।

    বাংলাদেশে ক্ষমতার হাতবদলের পরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের উপরও হামলা হচ্ছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। সরকারি স্তরে না হলেও সাধারণ মানুষের মনোভাব যেন পারস্পরিক ভাবে কিছুটা তিক্ত। এর প্রভাব পড়েছে সংস্কৃতিতেও।

    কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রদের একাংশের প্রতিবাদে কর্তৃপক্ষ আমন্ত্রিতদের অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগ দিতে বারণ করেন। এ নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। এমনই পরিস্থিতিতে ভারতে এসেছেন সাজু। তাঁর ভারতে আসার ক্ষেত্রে কোনও বাধা তৈরি না হয়নি।

    সোমবার বেলা একটা নাগাদ চ্যাংড়াবান্ধা স্থল বন্দর দিয়ে ভারতে আসেন সাজু আহমেদ। আজ, মঙ্গলবার তিনি লাটাগুড়ি ফোক ফেস্টিভ্যালে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। এ ছাড়াও নতুন বছরের জানুয়ারি মাসে ১০, ১১ এবং ১২ তারিখে কোচবিহারের মৌয়ামারিতে তিনি গান শোনাবেন।

    উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রীয় সংগীত পর্ষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পেয়েছেন তিনি। বলেন, ‘গানের মাধ্যমেই সম্প্রীতির বার্তা দিতে চাই। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে আবহ তৈরি হয়েছে, সেই আবহ ঘুচে যাক, মুছে যাক সব বিদ্বেষ। যাঁরা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, তাঁরা কেউ–ই দেশপ্রেমী নন। কেউ দেশপ্রেমী হলে অন্য দেশকে ঘৃণা করতে পারেন না।’

    বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার সমালোচনা করেছেন সাজু। বলেন, ‘যারা মন্দির–মাজারে হামলা চালাচ্ছেন, তারা দুষ্কৃতী। ধর্ম যদি রক্ষা করার প্রশ্ন আসে, তা হলে ধর্মস্থানে হামলা কেন? এ সব যারা করছে, তাদের লক্ষ্য নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি।’

    ভারতে এসে পৌঁছলেও পথটা ততটা মসৃণ ছিল না। ভিসা পাওয়ার জন্য বেগ পেতে হয়েছে। সাজু বলেন, ‘লাটাগুড়ি ও কোচবিহার থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর ভিসার জন্য আবেদন করি গত অক্টোবরে। কিন্তু তখন ভিসা পাইনি। নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে ফের ভারতীয় হাই কমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করি। সেখানে লাটাগুড়ি ফোক ফেস্টিভ্যালের আমন্ত্রণপত্রও জমা দিই।’ এর পর তিন মাসের জন্য ভিসা পেয়েছেন সাজু।

    বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের বাসিন্দা সাজু। সেখান থেকে ট্রেনে বুড়িমারিতে আসেন তিনি। হেঁটে ভারতে প্রবেশ করেন। তাঁর হাতে সম্প্রীতির সাদা পতাকা। কণ্ঠে লোকসুর। লালনের মাটির সুর।

  • Link to this news (এই সময়)