• নওদা থেকে জঙ্গি সন্দেহে ধৃত যুবকরা মহিলাদেরও 'রিক্রুট' করার চেষ্টায় ছিল, তদন্তে এসটিএফ 
    আজকাল | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মুর্শিদাবাদ এবং আশেপাশের কিছু এলাকায় জঙ্গি সংগঠন বাড়ানো এবং নাশকতা করার চেষ্টায় ছিল এসটিএফ-এর হাতে মুর্শিদাবাদের নওদা থেকে ধৃত সাজিবুল শেখ এবং মোস্তাকিন মন্ডল। জেলায় জঙ্গি সংগঠন বাড়ানোর জন্য এবার তাদের নজরে ছিল ঘরের মহিলারাও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে এখবর। গতকাল তাদের গ্রেপ্তার করে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। সূত্রের খবর, মহম্মদ সাব শেখ নামে এক জঙ্গির 'পরিচিত' কয়েকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে নির্দেশ পেত এই দুই যুবক। মিস্ত্রির কাজ করার অছিলায় তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে যুবকদের 'জিহাদি' কাজে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে ধৃত দুই যুবকের 'ফাঁদে' কয়েকজন মহিলাও পা দিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার ধৃতদের বহরমপুর আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের স্বার্থে দুই যুবককে অসম পুলিশ 'ট্রানজিট রিমান্ডে'  নিয়ে যেতে পারে বলেও জানা গিয়েছে। 

    ধৃতদের মধ্যে একজন সম্প্রতি বিদেশেও গিয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে। তদন্তকারীদের অনুমান দুই যুবকের ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও তারা আদপে বাংলাদেশি নাগরিক।  সোমবার নওদা থানার দুর্লভপুর এবং ভোলা গ্রামে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ অভিযান চালায় এবং 'আটক' করা হয় সাজিবুল শেখ এবং মোস্তাকিন মন্ডল নামে দুই বছর পঁচিশের যুবককে। রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা  হয়। সূত্রের খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে আতঙ্কবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিএনএস-এর ১১৩-র ৩ ,৪, ৫, ৬ এবং ৬১ (২) নম্বর ধারা এবং ১৪ ফরেনার্স  অ্যাক্টে এফআইআর করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর অসম ও রাজ্য পুলিশের এসটিএফ হরিহরপাড়া থেকে  জঙ্গি সন্দেহে  মিনারুল শেখ এবং আব্বাস আলী নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল। এবার ঠিক তার পাশের এলাকা নওদা থেকে আরও দুই যুবক জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।  

    নওদা থেকে ধৃত দুই যুবক আর কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিল তা খোঁজ নিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতের কেরালায় অভিযান চালিয়ে অসম পুলিশের এসটিএফ মহম্মদ সাব শেখ নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। সাব নিজের পরিচয় ভাঁড়িয়ে  দীর্ঘদিন ধরে হরিহরপাড়াতে আত্মীয়দের বাড়িতে থাকছিল। গতকাল এসটিএফ-এর র হাতে নওদা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সাজিবুল তারই পিসতুতো ভাই বলে জানা গিয়েছে। ধৃত সাজিবুলের শাশুড়ি অর্জুনা বিবি বলেন, 'গতকাল রাতে নওদা থানার পুলিশ এবং অন্য কিছু জায়গার পুলিশ এসে সাজিবুলকে ঘর থেকে নিয়ে যায়। সাজিবুলের সঙ্গে সাব শেখের কোনও যোগাযোগ ছিল না। আত্মীয় হিসেবে হয়তো ছয় মাস অন্তর তাদের একবার দেখা সাক্ষাৎ হত সেই সময় কথা হত।' তবে ভোলা গ্রাম থেকে ধৃত অপর জঙ্গি মোস্তাকিনের সঙ্গে সাজিবুলের যে যোগাযোগ ছিল তা  স্বীকার করে নিয়েছেন ওই মহিলা।

    তিনি বলেন," মোস্তাকিন  কখনও  আমাদের বাড়িতে আসেনি। তবে দু'জন একই উপাসনাস্থলে যেত। সেই সূত্রে তাদের পরিচয় হয়েছিল।' জঙ্গি সন্দেহে ধৃত  মোস্তাকিন মন্ডলের মা আফরোজা বিবি বলেন,'আমার ছেলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তার  মানসিক কিছু সমস্যা রয়েছে। দু'বছর আগেই আমার একমাত্র  ছেলের বিয়ে দিয়েছিলাম।' তাঁর দাবি,'আমার ছেলে কোনওরকম জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত নেই। বর্তমানে ছেলে ডোমকলে কাঠের ,কাঁচের ও গ্রিলের  মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছিল। বেশ কয়েক বছর আগে মিস্ত্রির কাজ করার জন্য আমার ছেলে একবার কলকাতা এবং দিল্লিতে গিয়েছিল।

    সেখানে গিয়ে তার ভালো না লাগায় ছেলেকে  গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলাম।' সাজিবুলের সঙ্গে কীভাবে তার ছেলের পরিচয় হয়েছিল তা জানিয়ে আফরোজা বলেন,'দুর্লভপুর এবং ভোলা পাশাপাশি  দুটি গ্রাম। সেই সূত্রেই আমার ছেলের সঙ্গে সাজিবুলের পরিচয় হয়েছিল।' বহরমপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী  বিশ্বপতি সরকার জানান ,'ধৃত দুই যুবকের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করা হয়েছিল। সিজেএম, সৈয়দ দিলওয়ার হোসেন তা মঞ্জুর করেছেন। আগামী ১৪ জানুয়ারি ফের তাদের আদালতে হাজির করা হবে।'
  • Link to this news (আজকাল)