সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে ভোট কাটার অভিযোগ তুললেন শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার বাম নেতা নিরাপদ সর্দারের নাম করে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘নিরাপদবাবুরা লাল ঝান্ডা নিয়ে ঘোরেন। একটাও মুসলমান ভোট কাটতে পারেন না, সব হিন্দু ভোট কাটেন তৃণমূলের সুবিধা করার জন্য।’
২০২৪-এ লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য উত্তাল হয়েছিল সন্দেশখালির ঘটনাকে সামনে রেখে। ভোটমুখী বাংলায় সেই সময় সন্দেশখালিকে কেউ কেউ ‘সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম’-এর সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন। অনেকেরই ভবিষ্যৎবাণী ছিল, সন্দেশখালিকে সামনে রেখে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে বহু হিসেবনিকেশই বদলে যাবে।
যদিও ভোটের ফলাফলের সঙ্গে কোনও জল্পনাই মেলেনি। এ রাজ্যের মোট ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৯টিতে জয়ী হয়, বিজেপি জেতে ১২টিতে, কংগ্রেস পায় ১টি আসন। বিধানসভার মতোই লোকসভাতেও বামেরা এ রাজ্যে শূন্যতেই ঝুলে থেকেছে।
এই ফলাফল যে বিজেপির কাছে একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না, প্রকাশ্যে তারা বহুবার সে কথা স্বীকারও করেছে। অমিত শাহ কখনও ৩৪, কখনও ৩৫-এর টার্গেট বেঁধে দিলেও, বিজেপি-র বঙ্গ ব্রিগেড সে টার্গেটের অর্ধেকও ছুঁতে পারেনি। উল্টে হুগলি বা কোচবিহারের মতো জেতা আসন হারিয়েছে।
তবে বসিরহাট আসনে কার্যত তুরুপের তাস খেলেছিল বিজেপি। সন্দেশখালি আন্দোলনের প্রধান মুখ সেই রেখা পাত্রকে প্রার্থী করেছিল তারা। স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন এই প্রার্থীকে।
অন্য দিকে সিপিএমের চমক ছিল নিরাপদ সর্দার। সন্দেশখালির ঘটনায় উস্কানির অভিযোগে এই নিরাপদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাঁর জেলযাত্রা সে সময় সন্দেশখালি-সহ গোটা রাজ্যে সিপিএমকে নতুন করে লড়াইয়ের শক্তি জুগিয়েছিল বলেও অনেকে বলেছিলেন। তবে তৃণমূলও মোক্ষম চাল দিয়েছিল প্রার্থী বাছাইয়ে। তারকা-সাংসদ নুসরত জাহানের বদলে আস্থা রেখেছিল বহুদিনের পোড় খাওয়া নেতা হাজি নুরুল ইসলামে।
৫২ শতাংশেরও বেশি ভোট পান হাজি নুরুল। প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮ লক্ষ ৩ হাজার ৭৬২ ভোট। সন্দেশখালির আন্দোলনের মুখ রেখা পাত্র সেখানে পান ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ২১৫ ভোট। যদিও সন্দেশখালি বিধানসভায় রেখা এগিয়ে ছিলেন। আর নিরাপদ সর্দার পান ৭৭ হাজার ৮৯৯ ভোট।
এই ফলাফলের পরই বিজেপির তরফে একাধিক বার অভিযোগ তোলা হয়, সিপিএম ভোট কেটে তৃণমূলের সুবিধা করে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্দেশখালি যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেখানে গিয়ে আবারও একই দাবি শুভেন্দু অধিকারীর।
শুভেন্দুর বক্তব্য, তাঁরা রাজ্যে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আর ৫ শতাংশ পেলেই পাশা ঘুরে যাবে। তবে শুভেন্দুর দাবি, সিপিএম হিন্দু ভোট কেটে তৃণমূলের হাত শক্ত করছে। শুভেন্দু বলেন, ‘আমরা এলে আপনাদের মনোনয়ন জমা দিতে দেবো। আপনারাও ভোটে লড়বেন। শুধু ভোটটা নষ্ট করবেন না।’
যদিও শুভেন্দুর এই বক্তব্যকে আমল দিতে নারাজ নিরাপদ সর্দার। তিনি বলেন, ‘ভোট কাটতে যাব কেন? আমরা মানুষকে সংঘবদ্ধ করার কথা বলি। আমাদের পার্টি ভোট কাটার পার্টি নয়, শ্রমিক শ্রেণির পার্টি। সমাজ পরিবর্তন করা আমাদের লক্ষ্য। শুভেন্দুরা যা করছে বা তৃণমূল যা করছে, তাতে তো সমাজ আর সমাজ থাকবে না, সংবিধান উঠে যাবে।’