দীপাবলিকেও যেন পিছনে ফেলল ‘নিউ ইয়ার্স ইভ’। ঘড়ির কাঁটায় ১২টা বাজতেই, কলকাতা পা রেখেছে নতুন বছরে। আর কলকাতায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাল ‘শব্দ-দানব’। ১২টা বাজার প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল দেদার বাজি-পটকা ফাটানো। ১২টার দিকে যতই ঘড়ির কাঁটা এগিয়েছে ততই বেড়েছে শব্দবাজির তাণ্ডব। ঘড়ির কাঁটায় যখন ঠিক রাত ১২টা, সেই সময়ে একের পর এক এমন শব্দবাজি ফাটে যে, মনে হয় যেন কামান দাগা হচ্ছে।
পিলে চমকানো সব শব্দ। গ্রিন বাজি তো দূর, আলোর বাজিরও হাতে গোনা। সবই প্রায় শব্দবাজি। পশ্চিমবঙ্গে বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল। এদিন বাজির শব্দ কত ডেসিবেলে পৌঁছেছিল তা হয়তো পরবর্তী সময়ে যন্ত্র বলবে। তবে, তা যে ১২৫ ডেসিবেলের সীমায় ছিল না, তা বলার জন্য কোনও যন্ত্রের প্রয়োজন নেই। কানই যথেষ্ট। নতুন বছর শুরুর মুহূর্তটি পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে 'শব্দ-সন্ত্রাস'। কোনও কোনও বাজির শব্দ যেন স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের মতো। বিরামহীন গোলা বর্ষণের মতো আওয়াজ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই শব্দ নিয়ন্ত্রণের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।
কলকাতার কেন্দ্রস্থল ধর্মতলা থেকে শুরু করে, টালিগঞ্জ থেকে টালা - প্রায় সর্বত্র ছবিটা ছিল একই। এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকাও বাদ যায়নি। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শব্দবাজির দাপটে কান পাতা দায় হয়ে পড়েছিল। শুধু শহর কলকাতা নয়, দুই চব্বিশ পরগণা, হাওড়া, হুগলি - কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলিরও একই অবস্থা। জেলার বিভিন্ন জায়গায় বর্ষবরণ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনেক জায়গায় বাজির প্রদর্শনীও দেখা গিয়েছে। সেই সব পুলিশকে জানিয়ে রাখা ঘোষিত কর্মসূচিতেও একইভাবে দেখা গিয়েছে শব্দের তাণ্ডব।
শুধু শব্দবাজি নয়, তার দোসর হয়েছে ডিজে জাতীয় সাউন্ড বক্সও। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলির বিভিন্ন জায়গা থেকে তারস্বরে ডিজে বাজানোর অভিযোগ এসেছে। প্রশাসন দেখেও দেখছে না বলে অভিযোগ। পাশাপাশি রয়েছে সাউন্ড বক্সে উচ্চগ্রামে গান বাজানো। রাত বাড়তে বাজি ফাটানো কমে আসলেও, বেড়েছে নাচ-গান, বেড়েছে সাউন্ড বক্সের আওয়াজ।
এই সকল পরিচিত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও এক নতুন ধরনের শব্দ। এই রাতে অনেক মোটরবাইকের সাইলেন্সার থেকেই বেরিয়েছে শব্দবাজি ফাটার মতো শব্দ। সাইলেন্সার খারাপ হয়ে গেলে যে ধরনের শব্দ হয়, সেই রকম। মোটরবাইকে এক ধরনের কারসাজি করে সাইলেন্সার থেকে এই শব্দ বের করা হয় বলে জানা গিয়েছে। বাজি, ডিজে বক্সের পাশিপাশি এই নতুন শব্দের তাণ্ডবও সহ্য করতে হয়েছে শহরবাসীকে।
সবথেকে সমস্যায় পড়েছে কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীরা। প্রচণ্ড শব্দে তাদের কষ্ট হয়। বর্ষবরণের রাতে আচমকা এই শব্দের তাণ্ডবে তাদের দিশাহারা অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় পথকুকুরদের আর্তনাদ করতে দেখা গিয়েছে। আতঙ্কে ছোটাছুটি করেছে বিড়ালরা। অনেক পশুপ্রেমী সংস্থার পক্ষ থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
দীপাবলির রাতেও শব্দবাজির তাণ্ডব দেখা যায়। তবে, সেই সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়। দীপাবলির দিন কয়েক আগে থেকেই শুরু হয় নিষিদ্ধ বাজি ধরপাকড়। তবে বর্ষবরণের আগে পুলিশের পক্ষ থেকে সেই ধরনের কোনও অভিযানের কথা শোনা যায়নি। বর্ষবরণের রাতে কলকাতা বা জেলার কোথাও শব্দবাজি ফাটানো বা ডিজে বাজানোর জন্য কারও বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করেছে, এমন খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের এই ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণেই হয়তো বর্ষবরণের আনন্দকে ছাপিয়ে গেল শব্দ সন্ত্রাস।