• প্রবীণদের স্মৃতি আঁকড়ে কৃষ্ণনগরের ছ্যাকরা গাড়ি
    বর্তমান | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ছ্যাকরা গাড়ির কথা আমরা কবি কিংবা লেখকদের গদ্যে-পদ্যে বহুবার শুনেছি। কল্পনার জগতে ঘোড়ায় টানা সেই গাড়ির ছবিও এঁকেছি। কান ফাটানোর হর্নের জায়গায় ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দ সঙ্গে ঘোড়ার টগবগ আওয়াজ মিলে সুন্দর সুর তৈরি হতো। কান পাতলে তা আদি বাসিন্দাদের স্মৃতির পাতায় শোনা যায়।‌ সেই ছ্যাকরা গাড়ির অস্তিত্ব ছিল এই মৃৎশিল্পের শহর কৃষ্ণনগরে। যদিও বর্তমানে টোটো-রিক্সার দাপটে তার অস্তিত্ব নেই। সময়ের সঙ্গে তা হারিয়ে গিয়েছে শহরের বুক থেকে। কিন্তু শহরের আদি বাসিন্দাদের স্মৃতি থেকে তা এখনও মুছে যায়নি। শহরের চায়ের দোকানে বয়োজ্যেষ্ঠরা একজোট হলেই কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে এই ছ্যাকড়া গাড়ির কথা। বিশেষ করে আলোচনার বিষয়বস্তু যখন হয়, শহরের যানজট। তাঁদের মুখে শোনা যায়, কৃষ্ণনগর শহরের রেলস্টেশনের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকত এই ছ্যাকড়ার গাড়ি। প্যাসেঞ্জার পেলেই ঘোড়া নিয়ে দৌড়। আজ সেখানে কৃষ্ণনগর রেলস্টেশন চত্বরে পা রাখার জায়গা থাকে না পথচলতি মানুষের। যা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই শহরবাসীর। 

    বঙ্গভূমির অন্যতম প্রাচীন শহর কৃষ্ণনগর। বাংলার ইতিহাসের অনেক গল্প জড়িয়ে আছে এই শহরের সঙ্গে। যার মধ্যে অন্যতম হল এই ছ্যাকড়া গাড়ি। যদিও এই ছ্যাকরা গাড়ির দেখা মূলত কলকাতা ও তার শহরতলি এলাকায়। কিন্তু যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখন ভাগীরথীর তীরবর্তী বঙ্গভূমির ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। কৃষ্ণনগর শহরের এই চাকচিক্য তখন কল্পনাতীত। শহরে বর্তমানে অবশিষ্ট ভাঙাচোরা রাস্তার অস্তিত্বও তখন ছিল না। তার মধ্যে দিয়েই ছুটত ছ্যাকরা গাড়ি। যে ঘোড়ার গায়ে চাবুক মারত তাকে কোলম্যান বলা হতো। কিন্তু কৃষ্ণনগরবাসী তাঁদের ‘কচুয়ান’ বলেই ডাকতেন। তাঁরা অধিকাংশরাই মুসলিম সম্প্রদায়ের হতেন। 

    বেশ অদ্ভুত রকমের দেখতে হতো এই ছ্যাকড়া গাড়িকে। গাড়ির যেখানে যাত্রীরা বসত, সেই জায়গাটা দেখতে ছিল অনেকটা পালকির মতো। সামনে থাকতো দু’টো ঘোড়া। আরশি গাড়ির ছাদের মাথার সামনে বসত কেচুয়ান। চবুকের আঘাত পড়লেই দৌড় মারত ঘোড়া। সেইসঙ্গে গতি বাড়ত ছ্যাকড়া গাড়ির।‌ অতীতে কৃষ্ণনগর শহরের ছ্যাকড়া গাড়ির কথাও উল্লেখ হয়েছে বিভিন্ন লেখকের বইয়ে। শহরের আদি বাসিন্দাদের কথায়, এই ছ্যাকড়া গাড়ির সংখ্যাও কৃষ্ণনগর শহরে নেহাত কম ছিল না। যদিও তা বর্তমানে টোটোর সংখ্যার কাছে নগন্য। অনেকেই বলেন, ছ্যাকড়া গাড়ি চলার প্রবণতা শহরের উচ্চবিত্ত ধনী পরিবারের মানুষজনদের সবচেয়ে বেশি ছিল। 
  • Link to this news (বর্তমান)