• বাংলাদেশি জঙ্গিদের নজরে দিনহাটার ৩ উপদ্বীপ, ফাঁসিদেওয়ার উন্মুক্ত গ্রাম
    বর্তমান | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, দিনহাটা: উপদ্বীপ! তিনদিক নদী দিয়ে ঘেরা স্থলভূমি। জারিধরলা, দরিবস ও শ্রীলঙ্কা। সংশ্লিষ্ট তিনটি উপদ্বীপের পাশেই বাংলাদেশ। গ্রামগুলিতে বাংলাদেশিদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে বলে অভিযোগ। উন্মুক্ত তিনটি গ্রামের সীমান্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। তাদের আশঙ্কা, সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলি ব্যবহার করছে বাংলাদেশি জঙ্গিরা। এদিকে, মহানন্দা নদীর পাড়ে ফাঁসিদেওয়ার মুড়িখাওয়া সীমান্তও উন্মুক্ত। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ও জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে সংশ্লিষ্ট সীমান্তগুলি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বিএসএফ ও প্রশাসন। তারা জমি কিনে সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলিতে কাঁটাতারের বেড়া পাতার উদ্যোগ নিয়েছে। 

    কোচবিহার জেলার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির মধ্যে শ্রীলঙ্কা অন্যতম। গ্রামটি দিনহাটা-১ ব্লকের অধীনে। দিনহাটার মূল ভূখণ্ড থেকে গ্রামটি কার্যত বিচ্ছিন্ন। গ্রামের তিনদিকে নদী। সংশ্লিষ্ট গ্রামের পাশেই বাংলাদেশের দুর্গানগর গ্রাম। যা লালমণিহাট জেলার অধীনে। একই অবস্থা সংশ্লিষ্ট ব্লকের জারিধরলা ও দরিবস গ্রামের। গ্রাম দু’টির পাশেই বাংলাদেশের লালমণিহাট জেলা।  কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় গ্রামগুলিতে অবাধে বাংলাদেশিরা যাতায়াত করছেন বলে অভিযোগ। যা পুলিস ও গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানসাই নদীর বুকে গ্রামগুলি গজিয়ে উঠেছে। কোচবিহার সদর কিংবা দিনহাটা থেকে নৌকায় নদী পেরিয়ে গ্রামগুলিতে যেতে হয়। কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় সড়ক পথেই বাংলাদেশিরা গ্রামে ঢুকছে বলে অভিযোগ। গোয়েন্দাদের ধারণা, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) মাতব্বররা গ্রামগুলিতে গিয়ে ডেরা বাঁধছে। বিভিন্নভাবে গ্রামের যুবক-যুবতীদের মগজ ধোলাই করছে বলে মনে হচ্ছে। কয়েক মাস আগে শ্রীলঙ্কা গ্রামে আলকায়েদা জঙ্গি সংগঠনের এক সদস্যের ডেরার হদিশ পেয়েছিল পুলিস। তারা সেই গ্রামে অভিযানও চালায়। কিন্তু পুলিস অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট উপদ্বীপগুলি নিয়ে গোয়েন্দারা উদ্বিগ্ন। তাঁরা এ ব্যাপারে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করেছে। ইতিমধ্যে গ্রামগুলির সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁটাতারের বেড়ার জন্য গ্রামগুলিতে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। শীঘ্রই তা কিনে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এদিকে, শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুড়িখাওয়া গ্রাম উন্মুক্ত। সংশ্লিষ্ট গ্রাম ফাঁসিদেওয়া ব্লকের অধীনে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুড়িখাওয়া গ্রামের পর মহানন্দা নদী। তারপর বাংলাদেশ। সহজেই মহানন্দা নদী পেরিয়ে বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে এপারে আসছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে মুড়িখাওয়ায় এবং বাংলাদেশে ‘নোম্যান্স ল্যান্ড’ দখল করে গড়ে উঠেছে বসতি। তা সত্ত্বেও এবার সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএসএফ। ইতিমধ্যে তারা সেখানে বেড়া দেওয়ার সরঞ্জাম মজুত করেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় উন্মুক্ত সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২-৩ কিমি। 

    বিএসএফের আধিকারিকরা বলেন, ফাঁসিদেওয়ার গ্রামে নজরদারি রয়েছে। পাশাপাশি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শুভ্রজিৎ মজুমদার বলেন, বিএসএফের আবেদনের ভিত্তিতে সেখানে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা ল্যান্ড পার্চেজ কমিটির কাছে সেই রিপোর্ট পাঠানোও হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)