নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০ হাজার টাকা দরের এক একটা ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)! এহেন আইইডি দিয়েই বাংলা-অসমের বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তের ভারতীয় অংশে বিস্ফোরণের ছক কষেছিল আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)। জঙ্গি সংগঠনের প্রধান জসিমুদ্দিন আনসারির নির্দেশে সেই কাজ ‘সম্পন্ন’ করতেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছিল মহম্মদ শাদ রবি ওরফে সাহেব। আইইডি তৈরির পর তা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর দায়িত্ব পিসতুতো ভাই সাজিবুল ইসলামকে দিয়েছিল শাদ। বেঙ্গল এসটিএফের জেরায় এই তথ্য দিয়েছে সাজিবুল নিজেই। সোমবার মুর্শিদাবাদের নওদা থানার দুর্লভপুর গ্রাম থেকে এসটিএফ পাকড়াও করেছিল সাজিবুল এবং তার এক দোসর মুস্তাকিন মণ্ডলকে। জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, বিস্ফোরক জোগাড় সহ লজিস্টিক যাবতীয় রসদ জোগাড়ে মোটা অর্থ এসেছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই’এর তরফে। আইএসআই’এর দুবাইয়ের এজেন্টরা সেই টাকা পাঠিয়েছিল সাজিবুলের অ্যাকাউন্টে।
এদিকে সাজিবুলকে জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, শাদের ভাই সাদ্দাম বাংলাদেশ থেকে এসে মুর্শিদাবাদে হরিহরপাড়ায় তাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় সাইবার ক্যাফে মালিক আলমগিরকে ধরে সাদ্দামের জন্য ভারতীয় নথি তৈরি করে দেয় সাজিবুল। সাদ্দাম তাকে জেহাদি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে। মগজ ধোলাই হওয়ার পর তাকে সংগঠনের ছোটখাট কাজকর্ম দেখতে বলা হয়। সাদ্দাম পরে বাংলাদেশ ফিরে গেলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলত। তদন্তকারীদের সাজিবুল জানিয়েছে, সাদ্দাম এবিটি প্রধানের ‘পিএ’। তদন্তকারীরা বলছেন, জসিমুদ্দিন রহমানি সাজিবুলকে এবিটি’র ‘কোর গ্রুপে’ জানায়, সংগঠনের উপস্থিতি জানান দিতে বাংলা-অসমের জনবহুল এলাকায় আইইডি বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে সাজিবুলকে পাঠানো হয় অসমের কোকরাঝাড়ে বিশেষজ্ঞ নুর ইসলামের কাছে। সাজিবুলের মোবাইল ঘেঁটে নূরের কাছে প্রশিক্ষণের বিভিন্ন ছবি পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তার মোবাইলে আইএসআইয়ের বেশ কিছু অফিসার ও হ্যান্ডেলারদের নাম পাওয়া গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে কথোপকথনের বেশ কিছু তথ্য শাদ সহ অন্য জঙ্গিরা ধরা পড়ার পর ‘ডিলিট’ করে দেয় শাদের পিসতুতো ভাই।
জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারছেন, নুরের কাছে প্রশিক্ষণ শেষে সাজিবুল মুর্শিদাবাদ ফেরে। আইইডি তৈরির অর্থ ও কাঁচামাল জোগাড় করছিল। অন্যদিকে কোকরাঝাড় থেকে ধৃত অপর জঙ্গি গাজিকে জেরা করে জানা গিয়েছে, সে এবং নুর একসময় বোড়ো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেই সংগঠনের বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র তারা চুরি করেছিল। এবিটি নতুন করে অসম-বাংলায় ডানা বিস্তার করার চেষ্টা শুরু করা মাত্রই সেই সব আগ্নেয়াস্ত্র সে নুর ইসলামের হাতে তুলে দিয়েছিল।