বিদায় ২০২৪, স্বাগত ২০২৫: উন্মাদনায় রাত জাগল কলকাতা
বর্তমান | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের পাশের রাস্তা দিয়ে বাবা-মায়ের হাত ছেড়ে দৌড়চ্ছে শিশুটি। পিছন থেকে মায়ের চিত্কার, ‘টুপিটা পরে নে।’ কনকনে ঠান্ডা নেই। কিন্তু একটু হাঁটাচলা করলেই গরম লাগছে—নেই তেমন পরিস্থিতিও। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুনের আবাহনে মেতে ওঠার এই তো সময়! আনন্দ চেটেপুটে নিতে তাই কোনও কার্পণ্য করেনি আট থেকে আশি। সকাল থেকে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় উৎসবমুখর মানুষের ভিড়। বিকেল গড়িয়ে রাত নামতেই পার্ক স্ট্রিটের মতো এলাকায় সেই ভিড় জনস্রোতের চেহারা নিয়েছে। তারপর রাত যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়ের ঘনত্ব ও উষ্ণতা। রাত ১২টা বাজার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় কাউন্টডাউন। ঘড়ির দু’টি কাঁটা ‘১২’ স্পর্শ করতেই সমস্বরে চিত্কার, ‘হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার…’! পাশে থাকা প্রিয়জনকে আলিঙ্গন, ফোনে-মেসেজে শুভেচ্ছা বিনিময় আর পানীয়র গেলাসে বরফকুচি মিশিয়ে ‘উল্লাস’—হুল্লোড় আর উন্মাদনায় বর্ষশেষের রাত জাগল কলকাতা। সেই সঙ্গে সাদরে স্বাগত জানাল ২০২৫-কে।
এদিন সকাল থেকে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, ইকো পার্ক, জাদুঘর, ময়দান চত্বরে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সামনে দুপুর থেকে পুলিসি তত্পরতা নজরে পড়ল। দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করে মানুষকে নিরাপদে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন উর্দিধারীরা। বর্ষবরণের রাতে নিরাপত্তার প্রশ্নে যাতে কোনও ফাঁকফোকর না থাকে, তার জন্য সদা তৎপর ছিল পুলিস। সাড়ে চার হাজার পুলিসকর্মী এদিন পথে ছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে কলকাতা পুলিস আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, মদ্যপ চালক বা হেলমেটবিহীন বাইকারদের মতো আইনভঙ্গকারীদের জন্য প্রস্তুত থাকবে ‘ডিজে ট্রাফিক কপস’। তারা যেন পুলিসের ‘অতিথি’ হওয়ার চেষ্টা না করে! তবে এ যে স্রেফ কথার কথা নয়, এদিন দুপুর থেকে পুলিসি তৎপরতা সেই প্রমাণ দিয়েছে। রাত ১২টা পর্যন্ত শহরের রাস্তার অভব্যতার অভিযোগে ১৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১২ লিটার মদ।
‘একটুও ঘাম হচ্ছে না। মনোরম ঠান্ডা। রোদটাও ভালো লাগছে’—ভিক্টোরিয়ার সামনে চিনেবাদাম কিনতে কিনতে বলছিলেন উল্টোডাঙার রাজর্ষি হালদার। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সকালেই বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ফ্লাস্কে চা, হটপটে রুটি-মাংস নিয়ে বহু মানুষ সপরিবারে এসেছিলেন ময়দান চত্বরে। আশপাশে চার্চ, তারামণ্ডল, নন্দন, মিলেনিয়াম পার্ক ইত্যাদি জায়গা ঘুরে ময়দানে ঘাসের উপর বসেই তৃপ্তির ভোজ সেরেছেন তাঁরা। প্রিন্সেপ ঘাট, গঙ্গার পাড় এমনকী ময়দান থেকেও বছর শেষের সূর্যাস্ত ক্যামেরাবন্দি করেছেন হাজার হাজার মানুষ। বন্ধুদের সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটে এসেছিলেন গড়িয়ার সঞ্চয়িতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলছিলেন, ‘পুজোর সময় একটা দিন আর বছরের এই শেষ দিনটা বাইরে থাকতেই ভালো লাগে।’