এই সময়, আলিপুরদুয়ার: স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাত ধরে আলিপুরদুয়ারে ফের ফিরে এসেছে ঢেঁকিছাঁটা চাল। এক বছর আগে আলিপুরদুয়ার দু’নম্বর ব্লকের ভাটিবাড়ির খলিসামারিতে দেবর্ষি নারদের বাহন দিয়ে লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে গ্রামের মহিলাদের। শহরে তো বটেই, প্রতিবেশী রাজ্য অসমেও কদর রয়েছে ফাইভার যুক্ত ওই অর্গানিক চালের।
ওই চাল এক দিকে যেমন স্বাদে–গন্ধে অতুলনীয়, অন্যদিকে তার পুষ্টিগুণ ডায়াবেটিস নিরাময়ে দারুণ ভালো কাজ করছে বলে দাবি উৎপাদক সংস্থাটির। তবে বাজার চলতি সাধারণ চালের তুলনায় দাম কিলো প্রতি কুড়ি টাকা বেশি। আপাতত ভাটিবাড়ির ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর চারটি ঢেঁকিতে দৈনিক উৎপাদন করা হচ্ছে এক কুইন্টাল চাল।
দেখতে শহরের সাদা ধবধবে পালিশ করা চালের মতো নয়। আকারে মোটা, গায়ে লালচে ও বাদামি আভা থাকে। দর্শনের দিক থেকে রাইস মিলের পালিশ চালের থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকরা ঢেঁকিছাঁটা চালে মজেছেন। বর্তমানে ওই কারখানায় যন্ত্রচালিত চারটি ঢেঁকি আছে।
মোটরের সাহায্যে চালানো হলেও কাঠের ঘর্ষণে ধান ভেঙে চাল বানানোর পদ্ধতি সাবেকি। গুণমান বজায় রাখতে বাজারের ধান না–কিনে বাছাই করা ফার্মার্স ক্লাব থেকে শুধুমাত্র অর্গানিক ধান কিনে ঢেঁকিতে ছেঁটে চাল তৈরি করেন গোষ্ঠীর সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মতীন্দ্রচন্দ্র দেবনাথ এক সময়ে রাজ্যের আমলা ও ইউনিসেফের আধিকারিক ছিলেন। অবসর নিয়ে গ্রামে ফিরে ওই ঢেঁকিছাঁটা চাল তৈরিতে সবাইকে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি ওল্ড ইজ় গোল্ড। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে পা মেলাতে গিয়ে আমরা আমাদের অনেক ঐতিহ্যকে আজ ভুলতে বসেছি। ঢেঁকিছাঁটা চালও তেমনি অবহেলিত। আজকের রাইস মিলে তৈরি সরু চকচকে চালে ফাইবার থাকে না। তার পুষ্টিগুণও অনেক কম। আমরা চাকচিক্যে প্রলুব্ধ হয়ে খাঁটি সোনাকে ভুলতে বসেছিলাম। আমি ফের ওই পুরোনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘এক দিকে গ্রামের মেয়েরা স্বনির্ভর হচ্ছেন, তেমনি ওই চাল খেয়ে মানুষ সুস্থ থাকছেন।’ সঙ্ঘের এক কর্তা মনীন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘প্রথমে আমাদের তৈরি চাল নিয়ে মানুষের খুব একটা আগ্রহ ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে কদর বাড়তে শুরু করেছে। অর্ডার দিলে আমরা টোটোতে করে বাড়ি বাড়ি চাল পৌঁছে দিয়ে আসি।’