দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
সেই সময়ে কলকাতা শহরের চেহারা অন্যরকম ছিল। ট্রাম ছুটে যেত ঘটাং ঘট শব্দ করে। ভিস্তিওয়ালা ধুয়ে দিত পথঘাট। প্রায় সোয়াশো বছর আগে ময়দানে তাঁবু পড়েছিল। সেখানে দেখানো হতো বায়োস্কোপ। হাতিবাগানেও এমন তাঁবু পড়েছিল। সেই ‘ম্যাডান বায়োস্কোপ’ এখন ঢুকে পড়েছে ইতিহাসের সাদাকালোয়। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বিনোদনের উপকরণও বলেছে। বদলে গিয়েছে বায়োস্কোপও। জলপাইগুড়ি শহরের তিস্তা উদ্যানে নয়া বছরে আকর্ষণ হতে চলেছে এমনই চলচ্ছবি।
কাঁধে টিনের বাক্স নিয়ে, ঘণ্টা বাজিয়ে পাড়ার রাস্তা দিয়ে হাঁক দিয়ে যেতেন সেই মানুষেরা। ছোট ছেলেমেয়েরা ছুটে আসত। টিনের বাক্সের ঘুলঘুলিতে চোখ রাখলেই নতুন দুনিয়ায় চলে যেত তারা। প্রবীণ অনেকের স্মৃতিতে এই বায়োস্কোপের বাক্স এখন সিনেমার রিলের মতো জেগে আছে। কিন্তু, এ সময়ের কচিকাঁচাদের কাছে এ সবই গল্পকথা। তাদের বায়োস্কোপের আনন্দ দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন তিস্তা উদ্যান কর্তৃপক্ষ। যদিও বহু আগের বায়োস্কোপ এখন ডিজিটাল এবং আধুনিক।
বন দপ্তরের উদ্যান ও কানন (উত্তর) বিভাগের অধীন তিস্তা উদ্যান। উত্তরের জেলাগুলিতে সরকারি পার্কগুলির মধ্যে অন্যতম এটি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঝকঝকে হয়েছে উদ্যান। এ বার তার মুকুটে যুক্ত হচ্ছে বায়োস্কোপ। উদ্যান সূত্রে খবর, শিশুদের গাছপালা, পশুপাখি চেনানো হবে ডিজিটাল বায়োস্কোপে। চেনানো হবে পাহাড়, নদী। একইসঙ্গে প্রাগৈতিহাসিক বিষয়গুলিকে ফিরিয়ে আনা হবে। এ সবের জন্য আধুনিক বায়োস্কোপের সঙ্গে থ্রি ডি স্ক্রিন বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন বছর থেকেই এর আনন্দ নিতে পারবে ছেলেমেয়েরা।
তিস্তা উদ্যানের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ অফিসার পাপন মোহন্ত বলেন, ‘ছোটরা এখানে খেলাধুলো করতে আসে। এর পাশাপাশি তাদের শিক্ষারও ব্যবস্থা করা হবে আনন্দের মধ্যে দিয়ে।’ বায়োস্কোপের জন্য বাক্স নয়, আধুনিক গ্যাজেট আনা হচ্ছে। পোশাকি নাম ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি) হেডসেট। এর মাধ্যমেই শিক্ষামূলক ছবি দেখতে পারবে স্কুলের শিশুরা।
এ ছাড়াও নববর্ষে যুক্ত হচ্ছে একাধিক আকর্ষণ। ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে বিভিন্ন মডেল তৈরি করে রাখা হবে উদ্যানে। এর সঙ্গে থাকছে ওপেন কুইজ, যেমন খুশি সাজো, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। পার্কে শিশু উপযোগী আবহ তৈরি করতে আর কী করা দরকার, এ নিয়ে উদ্যান কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এঁদের একজন অনামিকা চক্রবর্তী বলেন, ‘খেলাধুলোর পাশাপাশি শিক্ষামূলক বিষয় দেখানোর উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য। এতে ছোটরা আগ্রহী হবে পার্কে আসতে।’