• বর্ষশেষের হর্ষ যেন বিমর্ষ না করে! দেশজুড়েই সতর্কতা
    এই সময় | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: ‘আমন্ত্রণপত্রেই’ লেখা — ট্রাই নট টু বি আওয়ার গেস্টস (আমাদের অতিথি না–হওয়ারই চেষ্টা করুন)। ‘হোস্ট’ কলকাতা পুলিশ। বর্ষশেষের উল্লাসে নাগরিকদের সচেতন করতে সোমবারই অভিনব পথটা ধরেছিলের উর্দিধারীরা। সেখানে ‘আমন্ত্রণপত্রে’ মদ খেয়ে গাড়ি চালানো, র‍্যাশ ড্রাইভিং, সিগন্যাল অমান্য করা, হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানো ইত্যাদি বেআইনি ও বিপজ্জনক কার্যকলাপ নিয়ে সতর্ক করা হয় আমআদমিকে।

    কিন্তু কে কার কথা শোনে! বেপরোয়া গতি থেকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোয় গত ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে কলকাতা পুলিশের কপালে। সবচেয়ে বেশি চিন্তা মদ্যপ চালকদের নিয়ে। আর শুধু কলকাতা নয়, গোটা দেশেই চিত্রটা এক। দিল্লি পুলিশও পার্টি স্টাইলে ‘আমন্ত্রণপত্র’ বানিয়ে পোস্ট করে এক্স–এ। তার মাধ্যমে যা জানিয়েছে, তার সহজ অর্থ হলো — মদ্যপান করে বর্ষবরণের রাতে অকারণে হুজ্জুতি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো–সহ যে কোনও বেআইনি কাজ করলে সটান যেতে হবে শ্রীঘরে। সেখানে ‘গরমাগরম ফ্রি ঠ্যাঙানি’র সু–বন্দোবস্ত!

    বর্ষবরণে দিল্লিতে কমপক্ষে ২০ হাজার পুলিশ এবং আধা–সামরিক কর্মী মোতায়েন করা হয়। কড়া নজরদারি সীমানা লাগোয়া এলাকাগুলিতেও। যে সব জায়গায় জনসমাগমের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের পর বাস ঘুরিয়ে বা মেট্রোর গেট বন্ধ করে নিরাপত্তা বজায় রাখতে উদ্যোগী হয়েছিল পুলিশ। মদ্যপ চালক এবং বেপরোয়া গতির গাড়ি আটকাতে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিলেন গুরুগ্রামেও।

    এমনিতে প্রতি বছরই ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের আবহে গোটা দেশের মতো কলকাতাতেও নামে মানুষের ঢল। পার্ক স্ট্রিটের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন আকর্ষক স্থানে ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। প্রতি বছর থাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবু বছরের শেষ সপ্তাহটা পুলিশকে মূলত অস্বস্তিতেই রাখে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কলকাতা পুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ’২৪–এর ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয় ৫৩৬টি, সিগন্যাল ভায়োলেশনে ৭,১৬৬ টি, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোয় ২৩৭টি, হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোয় ৪,৬০৯টি মামলা হয়েছে। এমন বিভিন্ন কারণে এই সময়ের মধ্যে মামলার সংখ্যা ৪৫ হাজার ৯২৭।

    এই প্রবণতায় মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ — কোনও শহরই কম যায় না। তাই নিরাপত্তাও আঁটসাঁট সর্বত্র। মুম্বই–প্রশাসন জানিয়েছে — মেরিন ড্রাইভ, গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া–র মতো জায়গায় লাউডস্পিকার, বাজি ফাটানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। পরিবেশ–দূষণের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। শহর জুড়ে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। মোতায়েন ছিল ১৫ হাজার পুলিশ। রাস্তায় স্পেশাল ফোর্সও নজরদারি চালিয়েছে।

    বেঙ্গালুরুতে শুধু এমজি রোড চত্বরেই দু’হাজারের বেশি পুলিশকর্মীকে রাখা হয়। মিনি কন্ট্রোল রুম থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারিও চলেছে তাল মিলিয়ে। সংবেদনশীল এলাকা চিহ্নিত করে বসানো হয় প্রায় ১৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মুখোশ পরা বা সিটি দেওয়ায় কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ। বছরের শেষ দিনে রাত দুটো পর্যন্ত মেট্রো এবং বাস পরিষেবা চালু রাখা হয়। মেট্রোয় মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি কামরায় নিরাপত্তাকর্মীদের মোতায়েন করা হয়। মহিলা পুলিশকর্মীদের বিশেষ দলেও ভরসা রাখে প্রশাসন। হায়দরাবাদে এ দিন মেট্রো চলে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত।

  • Link to this news (এই সময়)