এই সময়: বাংলাদেশে জেলবন্দি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মামলার শুনানি রয়েছে কাল, বৃহস্পতিবার। তার একদিন আগে, মঙ্গলবার চিন্ময়ের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। চিকিৎসার কারণে রবীন্দ্র এখন এ বাংলায়।
মঙ্গলবার ব্যারাকপুরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন কুণাল। সুযোগ পেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্র। তিনি বাংলায় আসার পর বিজেপি–র একাধিক নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার কুণালের সঙ্গে রবীন্দ্রর সাক্ষাৎ বাড়তি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক বিবৃতি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই বক্তব্যকে চিন্ময়কৃষ্ণের আইনজীবী এ দিন স্বাগত জানান। মমতার কথায় তাঁদের ‘মনোবল বেড়েছে’ বলেও কুণালকে জানিয়েছেন রবীন্দ্র। পাশাপাশিই সিএম–এর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন প্রবীণ ওই আইনজীবী। যদিও নতুন বছরে মুখ্যমন্ত্রীর ঠাসা কর্মসূচি। ফলে এই সাক্ষাৎ আদৌ সম্ভব হবে কি না, সেটা স্পষ্ট নয়।
অশান্ত বাংলাদেশে চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে সওয়াল করায় আদালত কক্ষে নিগৃহীত হতে হয়েছে রবীন্দ্রকে। প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তবে পিছু হটেননি তিনি। জানা গিয়েছে, কুণালকে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন এই আইনজীবীই। তার পরেই মঙ্গলবারের সাক্ষাৎ।
পড়শি দেশের নানা ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন রবীন্দ্র। কিন্তু তার কোনও উত্তর আসেনি বলে এ দিন কুণালকে জানান তিনি। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত সরকারের অবস্থানে চিন্ময়কৃষ্ণর আইনজীবী কিছুটা হতাশই। কুণালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার নিয়ে ভারত সরকারের সাহায্য চেয়েছি। সংখ্যালঘু মানে শুধু হিন্দু নয়, অন্য সংখ্যালঘুরাও আছে। তবে চিঠি দিলেও উত্তর পাইনি।’
এ দিন রবীন্দ্রর সঙ্গে দেখা করার পর ফেসবুকে কুণাল লেখেন — ‘বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে চিন্ময়কৃষ্ণর মামলার শুনানি রয়েছে। রবীন্দ্রর আশঙ্কা, (চিন্ময়কে) জামিন দেওয়া হবে না। তবে আইনি লড়াইয়ের ব্যবস্থা থাকছে। ওঁর (রবীন্দ্রর) যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে, কিন্তু শরীরের অবস্থা দেখলাম খুব খারাপ।’ জোড়াফুল–মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ওই আইনজীবী। তিনি এ–ও বলেছেন যে, কলকাতা দখলের হুমকির জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মন্তব্য বাংলাদেশে তাঁদের মনোবল বাড়িয়েছে।’
প্রতিবেশী দেশে অশান্তির প্রেক্ষাপটে সেখানে আটকে থাকা ভারতীয়দের সুরক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিসেনা পাঠানোর প্রস্তাব প্রথম দিয়েছিলেন মমতা। ও পারের ঘটনাবলি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকেই পদক্ষেপ করতে হবে বলেও একাধিক বার জানিয়েছেন মমতা। দলীয় ভাবেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু–নিগ্রহের সমালোচনা করেছে তৃণমূল। পড়শি দেশের ঘটনাবলির প্রভাব সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পড়ছে বলেও তৃণমূলের পর্যবেক্ষণ। এই পরিস্থিতির সুযোগে গেরুয়া শিবির বাংলায় রাজনীতি করতে চাইছে বলে জোড়াফুল শিবিরের দাবি। বিজেপি এই দাবি খারিজ করেছে।