• নববর্ষেই ওডিশায় নিজের ‘ঘর’-এ ফিরছে জ়িনাত
    এই সময় | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: সবাইকে নাস্তানাবুদ করে তার জঙ্গলমহল–সফর আপাতত শেষ। নতুন বছরের সকালেই ওডিশায়, নিজের ‘ঘর’ সিমলিপালে ফিরছে জ়িনাত।

    মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বর্ষশেষের রাতেই কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতাল থেকে খাঁচাবন্দি জ়িনাত রওনা হলো সিমলিপাল টাইগার রিজ়ার্ভের পথে।

    বিশেষ গাড়িতে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার যাত্রাপথ পেরোতে সময় লাগবে প্রায় ১২ ঘণ্টা। সব হিসেব মতো চললে, বর্ষবরণের দুপুরেই বছর দুয়েকের বাঘিনি জ়িনাত পৌঁছে যাবে তার ফেলে আসা ‘ঘরে’, যেখানে তাকে মহারাষ্ট্রের তাডোবা আন্ধেরির জঙ্গল থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল নভেম্বরে। আপাতত সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে জি়নাত। তবে সোমবারের মতো মঙ্গলবারও তাকে খেতে দেওয়া মাংস ছুঁয়ে দেখেনি বাঘিনি। যদিও এ দিন সে পর্যাপ্ত জল খেয়েছে।

    রবিবার বাঁকুড়ার জঙ্গলে ধরার পরে সোমবার বিকেলে রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা জানিয়েছিলেন, ওডিশা সরকারের তরফে চিঠি পেলেই তাঁরা জ়িনাতকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবেন। ওডিশা এবং এনটিসিএ (ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটি)–এর তরফে সেই আবেদনপত্র জমা পড়ে সোমবার রাতেই। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গের বনকর্তারা জ়িনাতকে ওডিশা পাঠানোর জন্য যাবতীয় নথি তৈরির কাজ শুরু করেন। খাঁচা পাল্টে বাধ্যতামূলক রক্তপরীক্ষাও হয় বাঘিনির।

    রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ‘আশা করছি আজ রাতেই জ়িনাতকে আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে রওনা করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের পশু চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত বোর্ড এবং এনটিসিএ–র স্ট্যটিউটরি কমিটির অনুমোদন এসে গিয়েছে। যে খাঁচায় ও রয়েছে, সেটা করেই ওডিশা পাঠানো হবে জ়িনাতকে। ওর কোনও শারীরিক সমস্যা আমরা পাইনি। দিন দুয়েক সলিড খাবার খায়নি ঠিকই, তবে পেট কিছুটা ভরা থাকলে এমন হওয়া আশ্চর্যের নয়।’

    মহারাষ্ট্রের তাডোবা থেকে জ়িনাতকে নভেম্বরের মাঝামাঝি ওডিশার সিমলিপালে উড়িয়ে আনা হলেও এই মুহূর্তে তার যাবতীয় দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপালের। সেই কারণে তাঁকে পাঠানো চিঠিতে এনটিসিএ–র এআইজি (ফরেস্ট) মহম্মদ সাজিদ সুলতান জ়িনাতকে মহারাষ্ট্র থেকে ওডিশা পাঠানোর ‘বিশেষ কারণ’টি আলাদা ভাবে উল্লেখ করেছেন।

    চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সিমলিপাল টাইগার রিজ়ার্ভের বাঘেদের জিনগত বৈচিত্র বাড়ানোর লক্ষ্যে জ়িনাত আর যমুনাকে (আরও একটি বাঘিনি) তাডোবা থেকে ট্রান্সলোকেট করা হয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অনুরোধ, জ়িনাতকে যত দ্রুত সম্ভব তারা সিমলিপালে ফিরিয়ে দিন।’

    জি়নাতকে মুক্ত জঙ্গলে ফেরাতে যাতে সমস্যা না–হয়, বন্দিদশায় সে যেন কোনও মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে না–আসে — এটাও নিশ্চিত করতে বলা হয় এনটিসিএ–র তরফে। বাংলার বনাধিকারিকরা যদিও আগেই জানিয়েছিলেন, জ়িনাতকে মানুষের ছোঁয়া থেকে দূরেই রাখা হবে।

    ২১ দিনে তিন রাজ্যে ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ হেঁটেছে জ়িনাত। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাকে সুস্থ ভাবে ধরার জন্য রীতিমতো প্রশংসিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বনাধিকারিক–কর্মীরা। কিন্তু তার পরেও এনটিসিএ একটা বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলার শীর্ষ বনকর্তাদের কাছে।

    জি়নাতকে বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঘুমপাড়ানি গুলি চালিয়ে ধরার পরে এনটিসিএ–র এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) মেনে কেন তাকে সরাসরি সিমলিপালে ফেরত পাঠানো হলো না। কেন তাকে আনা হলো আলিপুর চিড়িয়াখানায়। এ ব্যাপারে বাংলার বনকর্তাদের অবস্থান স্পষ্ট। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, বাঘিনি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়েছে, তাই তার সুস্থতা নিশ্চিত করার দায়িত্বও এ রাজ্যেরই। সেটার জন্যই তাকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় এনে শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। আপাতত জ়িনাতের জন্য প্রহর গুনছে সিমলিপাল। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরবে। কিন্তু থাকবে কত দিন? ফের যদি সে... !

  • Link to this news (এই সময়)