মঙ্গলবার সন্দেশখালি জনসভা থেকে তাঁর এই ঘোষণা আপাত ভাবে অরাজনৈতিক মনে হলেও, যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। কারণ, আপাদমস্তক রাজনৈতিক চরিত্র শুভেন্দুর গীতা–বিলি ঘোষণার মধ্যে যে আদপে ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশল–ই লুকিয়ে, তা সহজবোধ্য।
২০২৪ লোকসভা ভোটে রাজ্যে বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার পরে বিজেপি যেনতেনপ্রকারে হিন্দু ভোট এককাট্টা করতে চাইছে। বাংলার বিজেপি নেতারা ঠারেঠোরে সেই বার্তা দিলেও শুভেন্দু এ বিষয়ে অনেক বেশি চাঁছাছোলা। এ দিন সন্দেশখালির সভা থেকে তাই কোনও রাখঢাক না–করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আর মাত্র পাঁচ শতাংশ হিন্দু ভোট বিজেপির দিকে এলে তৃণমূল সরকার রাজ্য থেকে উৎখাত হবে। বিজেপি বাংলায় এলে গুজরাটের মতো উন্নয়ন হবে। উত্তরপ্রদেশের মতো সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে।’
বাম দলগুলির কাছে তাই শুভেন্দুর আহ্বান, ‘আপনারা তো তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে পারছেন না। হিন্দু ভোট কেটে তৃণমূলেরই সুবিধা করে দিচ্ছেন। তাই বামপন্থীদের বলব, ভোট নষ্ট করবেন না। ভোটটা বিজেপিকে দিন। আমরা ক্ষমতায় এলে পঞ্চায়েতে লড়তে পারবেন। পুরসভায় লড়বেন। আমরা মনোনয়ন জমা দিতে বাঁধা দেব না। তৃণমূলকে তাড়াতে হবে। সেটা তখনই সম্ভব, যখন আরও পাঁচ শতাংশ বেশি হিন্দু ভোট বিজেপি পাবে।’
শুভেন্দুর কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোটি টাকা দিলেও হিন্দুরা আর তৃণমূলকে ভোট দেবে না। যেমন, কেন্দ্রীয় সরকার কোটি টাকা দিলেও সংখ্যালঘুরা বিজেপিকে ভোট দেবে না।’ তাঁর সাফ কথা, ‘সোজা কথা সোজা ভাবে বলা ভালো। তুমি আমার, আমি তোমার। ভোট নেই তো আমিও নাই।’ তৃণমূল অবশ্য মনে করছে, মমতা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে না–পেরে এখন তীব্র ধর্মীয় উস্কানির পথে হাঁটতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা।
শুভেন্দুর আগে সোমবারই সন্দেশখালিতে সভা করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা থেকে তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, দুষ্টু লোকের খপ্পরে পড়বেন না। এ দিন সন্দেশখালিতে তার জবাবও দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘কে দুষ্টু লোক মাননীয়া? সন্দেশখালির মানুষ সব ভুলে যাবে? আমি সব ভুলে যাব?’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের সব থেকে দুষ্টু লোক বলেও আক্রমণ করেছেন তিনি। শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে সন্দেশখালি নিয়ে কমিশন তৈরি হবে। তখন অনেককেই জেলের ভিতর থাকতে হবে। বদলা নেব। সুদ–সহ নেব।’
জবাবে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘বিজেপির ক্ষমতায় আসার ইচ্ছে হলো অনেকটা কুঁজোর চিৎ হয়ে শোওয়ার শখের মতো। গামছার ধোপা বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছের মতো। বিজেপির এ দিবাস্বপ্ন কোনওদিন পূরণ হবে না।’