• দিনহাটায় ভুয়ো প্ল্যান কাণ্ডে পুরকর্মী উত্তম চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করল পুলিস 
    বর্তমান | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, দিনহাটা: গভীর রাত পর্যন্ত টানা জিজ্ঞাসাবাদে কথাবার্তায় প্রচুর অসঙ্গতি ও উপযুক্ত প্রমাণ হাতে আসার পর গ্রেপ্তার করা হল উত্তম চক্রবর্তীকে। উত্তম দিনহাটা পুরসভার পূর্ত বিভাগের কর্মচারী। তাঁর বিরুদ্ধে বিল্ডিং প্ল্যানের ভুয়ো রসিদ দেওয়ার অভিযোগ। এক বাসিন্দা সম্প্রতি পুরসভায় খোঁজখবর নিতেই জানতে পারেন তাঁকে দেওয়া প্ল্যানের রসিদ ভুয়ো। এরপরই তদন্তের স্বার্থে দিনহাটা পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার অলোককুমার সেন দিনহাটা থানায় উত্তমের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। মঙ্গলবার ধৃতকে দিনহাটা মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন । 

    দিনহাটা আদালতের সরকারি আইনজীবী নীহাররঞ্জন গুপ্ত বলেন, সরকারি নথি জালিয়াতি ও সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে উত্তম চক্রবর্তী নামে এক পুরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে এদিন আদালতে তোলে পুলিস। অভিযুক্তকে ১৩ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। 

    ২০২১ সালের আগে পর্যন্ত অফলাইনে চলত প্ল্যানের অনুমোদন। একুশ সালে অনলাইনে কাজ শুরু হলে পুরনো বাড়ির মালিকদের অনুমতি নেওয়ার তিনবছরের জন্য ছাড় দেওয়া হয়। যথারীতি তাঁরা পুরসভায় আবেদন করা শুরু করেন। বেআইনিভাবে কোথাও বাড়ি নির্মাণ হয়েছে কি না খোঁজ শুরু করে পুরকর্তৃপক্ষ। পুরসভার পূর্ত বিভাগ বিষয়টি দেখভাল করছিল। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারী উত্তম অতি উৎসাহী ছিলেন এই বিষয়ে। শহর ঘুরে ঘুরে নতুন বাড়ি তৈরি করছেন যাঁরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। বাড়ি তৈরির জন্য বিল্ডিং প্ল্যান পাশেরও আশ্বাস দেয়। 

    সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের বার্নিংঘাট রোডের এক বাসিন্দার। ওই ব্যক্তি প্ল্যান পাশের জন্য পুরসভায় আবেদন করেন। ওই ব্যক্তি পুরসভার কর বাবদ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা উত্তমের হাতে দেন। প্ল্যানের অনুমোদনপত্র সহ পুরসভায় প্রায় ৬৬ হাজার টাকা জমা করার রসিদ দিয়েছিলেন উত্তম। নিশ্চিন্তে ছিলেন ওই বাসিন্দা। সম্প্রতি তাঁর বাড়ির ফের কাজের জন্য পুরসভার অনুমতির প্রয়োজন ছিল। পুরনো কাগজপত্র দেখিয়ে নতুন করে আবেদন করার জন্য পুরসভায় আসেন তিনি। তখনই তাঁর কাগজপত্র দেখে চক্ষু চড়কগাছ পুরকর্তৃপক্ষের। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া কোনও টাকা পুরসভায় জমা পড়েনি। রসিদটি ভুয়ো। সেখানে সই ছিল পদত্যাগী চেয়্যারম্যান গৌরীশঙ্কর মাহেশ্বরী ও পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের। পুরসভার সিলও রয়েছে তাতে। 

    এরপরেই দিনহাটা থানার দ্বারস্থ হয় পুরসভা। এগজিকিউটিভ অফিসার উত্তমের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে উত্তমকে। তদন্তের স্বার্থে পুরসভার একাধিক কর্মীকে থানায় তলব করা হয়েছিল। সোমবার প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর মাহেশ্বরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিস কর্তারা। সরকারি টাকা আত্মসাৎ, নথিপত্র জালিয়াতি করার উপযুক্ত প্রমাণ হাতে মিলতেই গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় উত্তম চক্রবর্তীকে।  আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুরকর্মীকে। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)