বছরের প্রথম দিনে বেলুড় মঠ, কাশীপুর উদ্যানবাটী ও দক্ষিণেশ্বরের পাশাপাশি শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মভূমি কামারপুকুরেও ভক্তের ভিড় চোখে পড়ার মতো। কামারপুকুরে ভোররাত থেকেই বিশেষ পুজোপাঠ ও মঙ্গল আরতির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান। শ্রীরামকৃষ্ণের আদি খড়ের ছাউনি মাটির বাড়িটিকেও সাজিয়ে তোলা হয়েছে। কামারপুকুরে ঠাকুরের ভক্তরা কল্পতরু উৎসব উপলক্ষে গোটা কামারপুকুর নাম সংকীর্তন সহযোগে প্রদক্ষিণ করছেন।
ঠাকুরের কাছে বছরের প্রথম দিন মনোবাসনা পূরণের দিন। তাই ভক্তরা তাঁদের মনের বাসনা পূর্ণ করতে কামারপুকুরে ভিড় করেছেন। এদিন শ্রীরামকৃষ্ণদেব ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন "তোদের চৈতন্য হোক"!
'কল্পতরু' কথার অর্থ হল ইন্দ্রলোকের সর্বকামনা পূরণকারী এক তরু যা "দেবতরু"। যে তরু সহজেই অন্যের ইচ্ছাপূরণ করে। ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি শ্রীরামকৃষ্ণও এরকম এক ইচ্ছেপূরণকারী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর সেই স্বর্গীয় প্রকাশের ঘটনাকে ঘিরেই এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল।
এদিন কল্পতরু রূপে ভক্তদের আর্শীর্বাদ করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। পূরণ করেছিলেন ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা। আর সেই থেকে ইংরেজি বছরের প্রথম দিনটি 'কল্পতরু উত্সব' নামে পরিচিত। ভক্তের বিশ্বাস, এই দিনটিতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে মন থেকে কিছু চাইলে সে ইচ্ছা পূরণ হয়।
'চৈতন্য হোক'! এই ছিল তাঁর এদিনের অমর অনন্য উচ্চারণ। যা আজও মানুষের সামনে আলোর উৎস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই অমর উচ্চারণের বয়স প্রায় দেড়শো হতে চলল। কিন্তু তা মলিন হওয়া তো দূরে থাক, দিনে দিনে তা মানুষকে যেন আরও বেশি করে প্রাণিত-উদ্বেলিত করে চলেছে। এদিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীরা রামকৃষ্ণ পরমহংসকে 'ঈশ্বরের অবতার' বলে স্তুতি করেছিলেন। সেই স্তব-স্তুতির আবেশে ভাবসমাধি হয়েছিল তাঁর। আর সেই ভাবস্থ অবস্থায় তিনি তাঁর ভক্তদের 'তোমাদের চৈতন্য হোক' বলে আশীর্বাদ করেছিলেন। তাঁদের ইচ্ছাও পূরণ করেছিলেন। সেদিন যে যা চেয়েছিলেন, তা-ই পেয়েছিলেন রামকৃষ্ণের কাছ থেকে। আর তার পর থেকেই দিনটির মহিমা ঘোষিত হয়। ভক্তেরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে আন্তরিক ভাবে রামকৃষ্ণের কাছে যা চাওয়া যায়, তা তিনি দেন। তাই তিনি 'কল্পতরু'।
কামারপুকুরে ঠাকুরের জন্মস্থান, ওদিকে কাশীপুরে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তাঁর জীবনের শেষদিনগুলি অতিবাহিত করেছিলেন। কাশীপুর উদ্যানবাটীতে ও কামারপুকুরে এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়।