সৌমিত্র সেন: 'চৈতন্য হোক'! এই ছিল তাঁর এদিনের অমর অনন্য উচ্চারণ। যা আজও মানুষের সামনে আলোর উৎস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই অনন্য ও অমর উচ্চারণের বয়স প্রায় দেড়শো হতে চলল। কিন্তু তা মলিন হওয়া তো দূরে থাক, দিনে দিনে তা মানুষকে প্রাণিত-উদ্বেলিত করেই চলেছে। কল্পতরু উৎসব। কাশীপুর উদ্যানবাটিতে তা ঘটেছিল ইংরেজি নববর্ষে। ১ জানুয়ারি। সালটা ছিল ১৮৮৬!
১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এই উৎসব হয়েছিল। এদিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীরা রামকৃষ্ণ পরমহংসকে 'ঈশ্বরের অবতার' বলে স্তুতি করেছিলেন। সেই স্তব-স্তুতির আবেশে ভাবসমাধি হয়েছিল রামকৃষ্ণের। আর সেই ভাবস্থ অবস্থায় তিনি তাঁর ভক্তদের 'তোমাদের চৈতন্য হোক' বলে আশীর্বাদ করেছিলেন। তাঁদের ইচ্ছাও পূরণ করেছিলেন। সেদিন যে যা চেয়েছিলেন, তা-ই পেয়েছিলেন রামকৃষ্ণের কাছ থেকে। আর তার পর থেকেই দিনটির মহিমা ঘোষিত হয়। ভক্তেরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে আন্তরিক ভাবে রামকৃষ্ণের কাছে যা চাওয়া যায়, তা তিনি দেন। তাই তিনি 'কল্পতরু'।
'কল্পতরু' একটি স্বর্গীয় বৃক্ষ। যা সকলের কামনা পূরণ করে। এই গাছের কাছে যে যা চায়, তাই পায়। ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি কাশীপুরে রামকৃষ্ণও এরকম এক 'সব-দেওয়া-মানুষ' 'সব-ইচ্ছে-পূরণ-করা-মানুষে' পরিণত হয়েছিলেন বলে বিশ্বাস। ঘোষণা করেছিলেন।
এদিন দক্ষিণেশ্বরে, কামারপুকুরে, বেলুড় মঠেও যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় 'কল্পতরু উৎসব'। বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব পালিত হলেও কাশীপুর উদ্যানবাটীতে এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। এখানেই রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর জীবনের শেষদিনগুলি অতিবাহিত করেছিলেন।
(ছবি: অয়ন ঘোষাল)