• হতাশা আর অভিমানে আর সাপ ধরতে চান না শিবেন্দ্র
    এই সময় | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
  • সূর্যকান্ত কুমার ■ কালনা

    চোখে মোটা কাচের চশমা, বয়স ৭৬। তবুও শরীরে তারুণ্যের জোয়ার। কোথাও বিষধরের দেখা মিললেই ডাক পড়ে কালনার সর্পবিদ শিবেন্দ্রনারায়ণ সরকারের। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান তিনি। সাপ বাঁচানোর সঙ্গে দূর করেন মানুষের মন থেকে আতঙ্কও। সেই শিবেন্দ্র বন দপ্তরের উপর হতাশা আর অভিমানে আর সাপ ধরতে চান না। তাঁর সাফ কথা, হয় বন দপ্তর তাঁকে সাহায্য করুক, না হলে ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ’ তিনি আর তাড়াবেন না।

    শিবেন্দ্রর অভিযোগ, সাপ ধরার প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব রয়েছে। এর পাশাপাশি বার বার আবেদন জানিয়েও সাপ রাখার জায়গা তিনি পাননি। তাঁর ধরে আনা সাপ বন দপ্তর নিয়মিত নিয়েও যায় না বলে অভিযোগ। তবে বন দপ্তরেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

    বন দপ্তরের কাটোয়া–কালনা রেঞ্জের রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিনহা বলেন, ‘উনি বহু দিন ধরে এই কাজ করছেন। মাঝে মধ্যেই সাপ নিয়ে আসা হয়। বুধবার গিয়ে ওঁর কাছে যা সাপ আছে, নিয়ে আসা হবে। আমাদের এলাকা বিশাল। সেই অনুপাতে কর্মীর অভাব রয়েছে। তা ছাড়া অত সাপ এনে রাখার মতো ক্যাপাসিটি নেই আমাদের। আমাদের অসুবিধার দিকটাও মানবিক দিক দিয়ে বুঝতে হবে ওঁকে।’

    বন দপ্তর যে শিবেন্দ্রর পাশে রয়েছে তা জানিয়ে রেঞ্জার বলেন, ‘উনি যে কাজটা করছেন তাতে যথেষ্ট উপকার হচ্ছে। আমরা ওঁর পাশে আছি। চেষ্টা করব, যাতে ওঁর কাছে ধরে আনা সাপ জমে না যায়।’

    কালনা মহকুমা হাসপাতালের কর্মী শিবেন্দ্রনারায়ণ ২০০৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। শরীরে বার্ধক্যর ছোঁয়া লাগলেও বিষধর সাপের দেখা মিলেছে শুনলেই তাঁর স্নায়ু টানটান হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, একটি জানলার উপরে লোহার রডে পর পর ঝুলিয়ে রাখা জারে রয়েছে চন্দ্রবোড়া, গোখরো। বর্তমানে ২৪টি সাপ রয়েছে তাঁর কাছে। পরিচিতি বাড়ায় সমস্যাও বাড়ছে শিবেন্দ্রর। ঘন ঘন ডাক পড়ায় ঘরে জমে যাচ্ছে জারবন্দি বিষধরের সংখ্যা।

    আপাতত তাঁকে সাহায্য করছেন দুর্গা বারিক নামে এলাকারই এক যুবতী। সেই দুর্গা বলেন, ‘সাপ জমে গেলে চিন্তায় থাকেন জেঠু। অভাব রয়েছে উপকরণেরও। জেঠু যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক বলেই মনে করি।’ শিবেন্দ্র বলেন, ‘নিজের পেনশনের টাকায় কয়েকটা উপকরণ কিনেছি। সে দিন দুর্গা একটি সাপ ধরছিল, তখন স্নেক ক্যাচারটা লক হয়ে গেল। ও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বাড়তি স্নেক ক্যাচার আমাদের কাছে ছিল না।’

    কোথাও সাপ ধরতে গেলে কেউ কেউ মোটর বাইকের তেলের খরচ দেন জানিয়ে বলেন, ‘আসলে লোকালয়ে থাকি, তাই সাপ জমে গেলে ভয় হয়। অল্পবয়সি ছেলেরা জারে লাঠি দিয়ে টোকা মারে সাপ ফণা তুলছে কি না দেখার জন্য। আবার সাপের শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য জারের গায়ে ছোট ছিদ্র রাখতে হয়। রাতে খটাশের মতো প্রাণীরা জারের উপর লাফালাফি করে। এক দিন রাতে শব্দ শুনে বেরিয়ে দেখি, একটি জারের ঢাকনা খোলা। তাতে অর্ধেক বেরিয়ে পড়েছে একটা গোখরো। তড়িঘড়ি সেটাকে ফের জারবন্দি করি।’

    এ ভাবে সাপগুলোকে যন্ত্রণা দিতে চান না জানিয়ে শিবেন্দ্র বলেন, ‘যদি জারবন্দি সাপগুলো রাখারও একটা জায়গা পাওয়া যায় তা হলে অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।’ শিবেন্দ্র যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা কালনা পুরসভার সেই ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মৌসুমি রায় কার্ফা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমিও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। সাপগুলো রাখার কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না তার চেষ্টা অবশ্যই করব।’

  • Link to this news (এই সময়)