কেউ এসেছেন শিলিগুড়ি থেকে, আবার কেউ বর্ধমান। অনেকেই কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে। একসময়ে ওঁদের খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, বেড়াতে যাওয়া সবই ছিল একসঙ্গে। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে যার মতো জীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। যোগাযোগ বলতে নয়-ছয় মাসে ফোন। কিন্তু তাও অনেকের সঙ্গে হয়ে ওঠেনি। বদলেছে দিন, বদলেছে ফোন নম্বর ও ঠিকানা। কর্মসূত্রে বেশির ভাগই বাইরে থাকেন। কিন্তু ফেসবুক মিলিয়ে দিয়েছে ওঁদের। তাই ঠিক হয় আরামবাগের খানাকুলে রামমোহন রায়ের স্মৃতি বিজড়িত কাছারিবাড়িতে সবাই দেখা করবেন। ওঁরা সবাই খানাকুলের রাজা রামমোহন রায় কলেজে পড়তেন। সেখান থেকেই বন্ধুত্বের শুরু। সোমবার দল বেঁধে রামমোহনের বাড়িতে বসেই চলে বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ।
আরামবাগের বাসিন্দা বণালী রায় জানান, প্রায় ৩০ বছর পর সবার সঙ্গে দেখা। একটা সময়ে এই রামমোহনের বাড়িতে আসতেন তাঁরা। কিন্তু তার পর কেউ কাজের জন্য আবার কেউ বিবাহসূত্রে বাইরে চলে যান। এতদিন পর ফের সবাই এক জায়গায় দেখা করতে পেরে খুশি। বন্দনা ভৌমিক বলেন, ‘বন্ধুদের কয়েকজনের সঙ্গে হঠাৎ একদিন ফেসবুকে দেখা হয়। সেখান থেকেই খোঁজ শুরু হয় অন্যদের। আমি কমার্সের ছাত্রী ছিলাম। আমার বিভাগেই ছিলেন জাকির হোসেন, দেবজিৎ, অভিজিৎ সরকাররা। ওদের সঙ্গে ফেসবুকেই যোগাযোগ হয়। তারপর সেখান থেকেই খুঁজে পাই শেখ রফিক, মদন পণ্ডিত, সৌমেন, নিশীথ, প্রদীপ, সৌরেন, আসিফ, শ্যামল, সন্দীপ, উজ্জ্বলকে। সবার সঙ্গে কথা বলে দেখা করার পরিকল্পনা করি।’
রফিক কলকাতা পুলিশে কর্মরত। মদন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর। কেউ ব্যবসায়ী, কেউ বিদেশি সংস্থায় কর্মরত। এ দিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে কোনও রকমে শিলিগুড়ি থেকে ট্রেনের টিকিট কেটে কলকাতায় আসেন বন্দনা। তার পর খানাকুল। কিন্তু এতটা পথ পাড়ি দিয়েও ক্লান্তি নেই চোখেমুখে। শুধু আনন্দের হাসি। সারাদিন খাওয়া- দাওয়া, আড্ডার মাঝেই চলে পুরোনো স্মৃতি নিয়ে নাড়াচাড়া। ২০ জন বন্ধু মিলে দিনটাকে স্মরণীয় করতে নাচ, গান, আবৃত্তিতেও মাতেন।
বর্ধমানে বাড়ি সুমিতার। তাঁর ছেলে নামী সংস্থায় কাজে যোগ দেবেন এ দিনই। কিন্তু তাও বন্ধুদের টানে তিনি চলে এসেছেন খানাকুলে। যে যার মতো করে জীবনের অভিজ্ঞতা বলতে তখন ব্যস্ত। এখন প্রায়ই তাঁরা এ ভাবে দেখা করবেন। জীবনের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেবেন একে অপরের সঙ্গে। ঠিক যেমন বছর ত্রিশ আগে হতো। একে অপরের হাতে হাত রেখে শপথ নেন, আবার দেখা হবে।