• লিলুয়ায় সরকারি খাস জমি ফের বিক্রি, বন্ধ নিকাশি নালা
    এই সময় | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, লিলুয়া: অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও গত ছ'মাসে প্রশাসনের তরফে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হয়নি। সরকারি খাস জমির হস্তান্তর ও মাটি দিয়ে নিচু জমি ফের ভরাট করার কাজ তাই চলছে রমরমিয়ে। সেই সঙ্গে আবর্জনা ও খাটালের বর্জ্য ফেলে আটকে দেওয়া হচ্ছে নিকাশির সব পথ। লিলুয়ার পিঁজরাপোল সোসাইটির সরকারি খাস জমি নিয়ে জমি মাফিয়া-চক্রের এমন দাপাদাপিতে বিপর্যস্ত স্থানীয়দের জীবন।

    হাওড়ার লিলুয়ার চাষিপাড়ার ওই ঘটনায় স্থানীয়দের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। অবিলম্বে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের দাবি করে তাঁরা গণস্বাক্ষরিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন লিলুয়া থানায়। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, সরকারি খাস জমি বেপোরায়া ভাবে লুট, পরিবেশ ধ্বংস ও নিকাশির সর্বনাশ হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে হাত গুটিয়ে বসে আছে পুলিশ-প্রশাসন?

    এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে লিলুয়ার পিঁজরাপোল এলাকার চাষিপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন, পিঁজরাপোল সোসাইটির হাতে থাকা সরকারি খাস জমি বিক্রি করে দিচ্ছে জমি মাফিয়ারা। ইতিমধ্যেই সে সব জমিতে একের পর এক কারখানার শেড ও গোডাউন তৈরি হয়েছে। যন্ত্র দিয়ে জমি ভরাটের কাজও চলছে। স্থানীয়দের আন্দোলনের চাপে হাওড়ার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরা সেই সময়ে সরেজমিনে সবটা খতিয়ে দেখে সরকারি জমির নোটিস সম্বলিত বোর্ড লাগিয়ে দেন।

    তখন সাময়িক ভাবে বন্ধও হয় জমি বিক্রি ও জমি ভরাটের কাজ। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, তার পর দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছটপুজোর সময়ে নজরদারির অভাবে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জমি মাফিয়ারা। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের রাস্তা থেকে নিকাশি নালা, সবই বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই, এ বার স্থানীয়রা গণস্বাক্ষরিত অভিযোগ জমা দিয়ে প্রশাসনের কাছে আইনি পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, ওই অভিযোগের প্রতিলিপি তাঁরা পাঠাবেন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শুরু করে হাওড়ার জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার, মহকুমাশাসক, বালি পুরসভার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক এবং জেলা ভূমি আধিকারিকের দপ্তরে।

    সূত্রের খবর, তাঁদের অভিযোগপত্রে হাওড়া পুরনিগমের (বালি পুরসভা যখন হাওড়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেই সময়কার) এক প্রাক্তন কাউন্সিলার ও তাঁর স্বামীর নামেও নালিশ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁরা উল্লেখ করেছেন নির্দিষ্ট ভাবে এক জমি মাফিয়ার নামও। যাঁদের নামে অভিযোগ, তাঁরা কেউ শাসক দলের, কেউ আবার শাসক দলের ঘনিষ্ঠ।

    প্রসঙ্গত, বালি পুরসভার অন্তর্গত লিলুয়ার ৮টি ওয়ার্ডকে ভুগতে হয় বর্ষায় জল জমার সমস্যায়। যা নিয়ে বার বার স্থানীয়দের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। লিলুয়ার দেবীমন্দির লেনে ৬ মাস ধরে এলাকার মানুষের বাড়িতে জল জমে থাকার ঘটনাও সম্প্রতি সামনে এসেছিল। সেখানে বালি পুরসভার দু’টি পাম্প চালিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে। সে ক্ষেত্রেও জল জমার কারণ হিসেবে লিলুয়ার নিকাশির প্রধান পথ মহানালা-র বুজে যাওয়া ও পথ হারিয়ে ফেলার সমস্যাই সামনে এসেছে।

    আবার লিলুয়ার নিকাশির প্রধান রাস্তা মহানালা এই পিঁজরাপোল সোসাইটির জমিতে এসেই পথ হারিয়েছে। পিঁজরাপোলের গোরু-মোষের যাবতীয় বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে ওই মহানালায়। ফলে, কঠিন বর্জ্য বা সলিড ওয়েস্ট-এ বুজে যাওয়া মহানালার এখন করুণ দশা।

    এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পাশাপাশি দল কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? যুব তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি কৈলাস মিশ্র বলেন, ‘দল কী ব্যবস্থা নেবে, তা নিয়ে আমরা দলে আলোচনা করব। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। পিঁজরাপোলের ওই জমি যে সরকারি খাস জমি, সেটা ছ’মাস আগেই আমরা ভূমি দপ্তরকে জানিয়েছিলাম। প্রশাসন বোর্ডও বসিয়ে দিয়েছিল। তার পরেও যারা সরকারি খাস জমি নিয়ে ব্যবসা করে মানুষের অসুবিধের সৃষ্টি করছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না।’

    এ বিষয়ে হাওড়ার মহকুমাশাসক ও বালি পুরসভার প্রশাসক অমৃতা বর্মন রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বাসিন্দারা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু বালি পুরসভায় আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে দেখব।’

  • Link to this news (এই সময়)