• উন্নত যাত্রী পরিষেবা রেলের লক্ষ নয়, পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি, বেচারাম মান্না...
    আজকাল | ০১ জানুয়ারি ২০২৫
  • মিল্টন সেন,হুগলি: আবারও সিঙ্গুর আন্দোলনের জয় হল। কোনওভাবেই সম্প্রসারণ করা যাবে না সিঙ্গুর আন্দোলন লোকালের গতিপথ। আঘাত করা যাবে না সিঙ্গুরের মানুষের আবেগকে। মুছে ফেলা যাবে না, সিঙ্গুর কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস। মঙ্গলবার থেকে এই দাবিতে আবারও আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সিঙ্গুর। বুধবারও ওই একই দাবিকে সামনে রেখে সম্প্রসারণ হওয়া আন্দোলন লোকাল ট্রেনটিকে তারকেশ্বর অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সিঙ্গুরের বাসিন্দাদের বাধার মুখে পড়তে হয়।

     রেল লাইনে নেমে ট্রেন অবরোধ করেন সিঙ্গুরের অগণিত মানুষ। এদিন সিঙ্গুর রেল স্টেশনের ১ নং প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকতেই মন্ত্রী বেচারাম মান্নার নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মী ও সিঙ্গুরের বাসিন্দারা টেনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। সিঙ্গুর আন্দোলন লোকালের বর্ধিত যাত্রাপথ অবরোধ করে চলতে থাকে বিক্ষোভ। ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেলপুলিশ এবং হুগলি জেলা গ্ৰামীন পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর বাধ্য হয়ে বর্ধিত যাত্রাপথে অগ্রসর হতে না পেরে ট্রেন, ফিরে গেল হাওড়া।

     আগামীকালও বর্ধিত যাত্রাপথে এগোনোর চেষ্টা করলে অবরোধ করা হবে, জানিয়ে দিল আন্দোলনকারীরা। এদিন এই আন্দোলন প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না জানিয়েছেন,২০০৯ সালে সিঙ্গুরের কৃষক আন্দোলন এবং আন্দোলনকারীদের আবেগকে সন্মান জানিয়ে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সিঙ্গুরবাসীর জন্য একজোড়া লোকাল ট্রেন দিয়েছিলেন। নাম দিয়েছিলেন 'সিঙ্গুর আন্দোলন লোকাল'। সেই লোকাল ট্রেন গত ১৫ বছর ধরে চলছে। ওই ট্রেন সিঙ্গুরের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। হঠাৎ পূর্ব রেলের তরফে সেই লোকাল ট্রেন দুটিকে তুলে নেওয়ার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তার প্রতিবাদেই সিঙ্গুরের মানুষের এই আন্দোলন। কারণ এই ট্রেনের সঙ্গে সিঙ্গুরের মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। পাশাপাশি এই ট্রেনদুটি যাত্রী পরিষেবার ক্ষেত্রেও সিঙ্গুরের মানুষের কাছে বড় ভূমিকা পালন করত। তাই অবিলম্বে রেল যাতে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং সিঙ্গুর আন্দোলন লোকাল যেনও চালু থাকে। সেই দাবিতেই মঙ্গলবার সকাল থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে।

    তিনি আরও বলেন,  এদিন সিঙ্গুর আন্দোলন লোকালের সিঙ্গুর থেকে সম্প্রসারিত পথ অবরোধ করে প্রতিবাদ জারি রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র আন্দোলন লোকালে রাস্তা আটকানো হয়েছে। আপ এবং ডাউন লাইন যাত্রী পরিষেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এই ট্রেনের সঙ্গে সিঙ্গুরের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সিঙ্গুরের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। আবেগকে আঘাত করা হয়েছে। এটা কৃষক আন্দোলনের প্রতীককে গুরুত্বহীন করার চক্রান্ত। ইতিহাসকে কখনও মুছে ফেলা যাবে না। সিঙ্গুরের মানুষ তা কখনও হতে দেবে না। তাই এদিন সকাল থেকেই সিঙ্গুরের মানুষ রেল লাইনে নেমেছে।

     বেচারাম বাবু আরও জানিয়েছেন, যাত্রীদের তরফে তিনি নিজের মন্ত্রীর প্যাডে রেলমন্ত্রী, রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান, পূর্ব রেলের জি এম এবং ডি আর এম কে জানানো হয়েছে। এদিনও রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, সিঙ্গুরের মানুষের আবেগে যাতে কোনও আঘাত না করা হয়। সিঙ্গুর আন্দোলন লোকাল যেনও চালু থাকে।

    বেচারাম বাবুর অভিযোগ, যাত্রী পরিষেবা উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে এই লোকাল ট্রেনের গতিপথ সম্প্রসারণ করা হয়নি। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে একটি অতিরিক্ত লোকাল ট্রেন রেল বাড়াতেই পারে। কিন্তু যাত্রী পরিষেবায় উন্নতি ঘটানো রেলের উদ্দেশ্য নয়। এটা পরিষ্কার, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি। কারণ ট্রেন চলাচলের সময় হাওড়া থেকে সিঙ্গুর পর্যন্ত প্রত্যেকটি রেল স্টেশনে 'সিঙ্গুর আন্দোলন লোকাল' কথাটি ঘোষণা করা হয়। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিঙ্গুর আন্দোলনের স্বীকৃতিকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা সকলের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গেছে।

     
  • Link to this news (আজকাল)