ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার ভক্তের সমাগম ঘটল তারাপীঠ মন্দির চত্বরে। সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে তারাপীঠ মন্দির চত্বর। ভোর বেলায় মাকে স্নান করিয়ে রাজরাজেশ্বরী বেশে সাজিয়ে হয় মঙ্গল আরতি। মঙ্গল আরতির পরে শুরু হয় মায়ের পুজো। আজ দিনভর বিশেষ পুজোর পাশাপাশি দুপুরে মাকে বিশেষ অন্নভোগ নিবেদন করা হবে। পাঁচ রকম সবজি, পাঁচ রকম মিষ্টি, খিচুড়ি, পোলাও, সাদা ভাত, মাছের মাথা, শোল মাছ পোড়া এবং কারণ-সহযোগে এই ভোগ নিবেদন করা হবে। সন্ধ্যাবেলায় সন্ধ্যারতি। সন্ধ্যা আরতির পর মাকে ফের বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হবে। যেখানে থাকবে লুচি, সুজি, মিষ্টি, পায়েস।
মন্দিরে আসা এক পুণ্যার্থী বলেন, প্রত্যেক বছরই আমরা বছরের শুরুর দিনটা মায়ের পুজো দিতে আসি। এবছর এসে ভালোই লাগছে। এ বছর যথেষ্ট ভিড় হয়েছে। তবে মন্দিরের নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় অনেকটাই সুবিধা হয়েছে তাঁদের। পুজো দিতে গিয়ে অনেকটা কম সময় লাগল।" আরেক পর্যটক বলেন, "আমরা প্রধানত ঘুরতেই বেরিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে মন্দির দর্শন করে গেলাম। বহু বছর আগে তারাপীঠ মন্দিরে এসেছিলাম। এখন ব্যবস্থাপনা আগের থেকে অনেক ভালো হয়েছে। নিরাপত্তার যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।"
প্রসঙ্গত তারাপীঠ মা তারার মন্দিরের গর্ভগৃহে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছিল আগেই। আর বাংলার চলতি মাস থেকে মন্দিরেও মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারছেন না পুণ্যার্থীরা। তারাপীঠ মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মন্দিরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। এবার মন্দিরের প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে মোবাইল জমা রেখে তারপর ভিতরে ঢুকতে হবে। পৌষ মাসের প্রথম দিন থেকেই নতুন নিয়ম কার্যকর করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, জেনারেল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভক্তদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে মন্দির কমিটি।
প্রসঙ্গত, তারাপীঠের মা তারার মন্দিরে নতুন নিয়ম চালু হয়েছিল পৌষ মাসের একেবারে প্রথম দিন থেকেই। মন্দিরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সম্প্রতি তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সেবাইতদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করেন জেলাশাসক। সেই বৈঠকে মন্দিরের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। কী কী সিদ্ধান্ত? মন্দির নির্দিষ্ট সময়ে খুলতে ও বন্ধ করতে হবে। মা তারার মন্দিরে নির্দিষ্ট সময়ে ভোগ নিবেদন বাধ্যতামূলক। পুজোর জন্য মাত্র দু'টি লাইন রাখা হবে-- একটি সাধারণ লাইন, একটি বিশেষ লাইন। সাধারণ লাইন এক ঘণ্টা আগে খোলা হবে, তারপর বিশেষ লাইন চালু হবে। এছাড়াও নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মন্দিরের গর্ভগৃহে গোলাপজল, আলতা দেওয়া যাবে না। ভক্তরা মায়ের চরণ স্পর্শ করতে পারবেন না বা মূর্তিকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন না। প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, এই নিয়মগুলি মন্দিরের ভিড় নিয়ন্ত্রণ, ভক্তদের সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, তাতে কাজ হয়েছে।