একটা সময় ছিল যখন বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা সাপ্লাই লাইন ছিল উত্তর ২৪ পরগনা। অশোকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় থেকে সুব্রত পাল, সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের মতো জাতীয় টিমের তারকারা সবাই ছিলেন এই জেলার প্রতিনিধি।
কিন্তু পরে জেলা কর্তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বে এই জেলার ফুটবল ছন্নছাড়া হয়ে যেতে বসেছিল। সেখান থেকেই ফের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা ফুটবল ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে, জেলার ৬ সেরা ফুটবল অ্যাকাডেমির অভিনব জোটের মাধ্যমে।
শ্যামনগরের ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব, বগুলার মতুয়া ফুটবল অ্যাকাডেমি, কল্যাণীর মাদেন ফুটবল অ্যাকাডেমি, পানিহাটির ফ্যাশন জ়োন ফুটবল অ্যাকাডেমি, সোদপুরের এসপি-১ফুটবল অ্যাকাডেমি আর বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমি জোট বেঁধে সারা বছর ধরে চালাবে অনূর্ধ্ব ১৩ ও অনূর্ধ্ব ১৫ বছর বয়সী ফুটবলারদের নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ ইউথ ডেভলপমেন্ট ফুটবল লিগ। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে।
টুর্নামেন্ট কমিটির অন্যতম কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘বয়স ভিত্তিক টিমগুলোর মূল সমস্যা কম টুর্নামেন্টে খেলা। সারা বছর প্র্যাক্টিস করে রাজ্য অথবা জাতীয় পর্যায়ে মাত্র এক মাস তারা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। ফলে ফুটবলারদের মধ্যে লড়াকু মেজাজ কিংবা ম্যাচ টেম্পারামেন্ট তৈরিই হয় না। ফলে সিনিয়র পর্যায়ে খেলতে গিয়ে তারা হারিয়ে যাচ্ছে।’
এই সমস্যা মেটাতেই এই লিগ শুরু করছে এই জোট। ৬ অ্যাকাডেমির দুটো বয়সভিত্তিক টিম সারা বছর ধরে প্রতি সপ্তাহের শনি ও রবিবার একে অন্যের বিরুদ্ধে একবার ঘরের মাঠে আর একবার প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ম্যাচ খেলবে। প্রতিটা পর্বের ম্যাচের আয়োজক হবে এক একটি অ্যাকাডেমি।
প্রথম পর্বের টুর্নামেন্ট এর মধ্যেই শুরু করে দিয়েছে পানিহাটি ফ্যাশন জ়োন ফুটবল অ্যাকাডেমি। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ফুটবলারদের উত্তেজনা তুঙ্গে। তাদের উৎসাহিত করতে প্রতি ম্যাচের সেরাকে পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে। প্রতি পর্বের চ্যাম্পিয়ন, রানার্সদের ট্রফি দেওয়ার পাশাপাশি থাকবে ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারও। ৬ পর্বের শেষে দুটো সেরা অ্যাকাডেমির মধ্যে গ্র্যান্ড ফিনালে আয়োজনের ভাবনাও রয়েছে সংগঠকদের।
এই টুর্নামেন্টে আয়োজনে যা খরচ হবে তা সমান ভাবে ভাগ করে নেবে প্রত্যেকটা অ্যাকাডেমি। নবাবের কথায়, ‘টুর্নামেন্টে সবাই খেলতে চায়। কিন্তু টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে সবাই অনীহা দেখায়। কারণ, আর্থিক ও সংগঠন করার লোকের অভাব। কিন্তু আমরা সবাই মিলে যদি একত্র হয়ে কাজটা করি, তা হলে এই উঠতি প্রতিভারা নিজেদের যাচাই করার অনেক বেশি সুযোগ পাবে। তাই আমাদের এই জোট। আশা করি, আগামী দিনে এই জোট আরও বাড়বে। এই লিগও দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।’
এই জোট প্রতিভা সন্ধানে নতুন দিশা দেখাবে বলেই মনে করছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ফুটবল মহল।