• সারি সারি কমলালেবুর গাছ থেকে ঝুলছে কমলা, অশোকনগর কি দার্জিলিং? বছরের প্রথমদিন উপচে পড়া ভিড় ...
    আজকাল | ০২ জানুয়ারি ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শীতের মিঠে রোদ গায়ে পড়তেই বাঙালির মন উড়ু উড়ু। কোথাও ঘুরে আসার জন্য হৃদয় ছটফটে। উত্তরের পাহাড় হাতছানি দেয়‌। চোখে ভেসে ওঠে দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর বাগান। বিপুল টাকা খরচ করে আর পাহাড়ে যেতে হবে না। বাড়ির কাছেই যে অভিনব ‘‌দার্জিলিং’‌ গড়ে উঠেছে। ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনেই উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে কমলালেবুর বাগান ঘিরে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ল। শীতের সকালে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় সমতলেই তাঁরা পাহাড়ে ঘোরার স্বপ্নপূরণ করলেন। 

    অশোকনগরের শ্রীকৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের সেনডাঙা গ্রাম। শিয়ালদা–বনগাঁ শাখার অশোকনগর রেল স্টেশন থেকে মাত্র ছ’‌কিলোমিটার দূরের পথ। সবুজ প্রকৃতির বুক চিরে চলে গিয়েছে। বছর দশেক আগে স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণ মণ্ডল আট বিঘা জমির উপর একটি নার্সারি গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে তিনি হরেক রকম বিদেশি ফলের গাছ নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা শুরু করেন। কী খেয়াল চাপল, দার্জিলিং, ভুটান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে কয়েকশো উন্নত প্রজাতির কমলালেবুর চারা আনলেন। গড়ে তুললেন শখের কমলালেবুর বাগান। চলতি শীতের মরশুম শুরু হতেই কমলালেবুতে সেই বাগান ভরে গিয়েছে। মুখে মুখে সে কথা ছড়িয়ে পড়ল। প্রথমে দু’‌জন পাঁচ জন করে কমলালেবুর বাগান দেখে যেতে থাকেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পার হতেই কমলালেবুর বাগানে ভিড় বাড়ছে। গত ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের পর থেকে দলে দলে পর্যটকরা সেনডাঙার কমলালেবুর বাগান দেখতে ভিড় করছেন। বুধবার ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনেই সেখানে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ল। 

    নারায়ণবাবুর বাগানে কয়েকশো কমলালেবুর গাছ রয়েছে। তাতে পাকা লেবু ঝুলে আছে। বাগানের ভিতরে ঢুকলে পাহাড় থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে অশোকনগরের গ্রাম বলে বোঝার উপায় নেই। গাছে ঝুলছে হাজার হাজার কমলালেবু। লেবুর গন্ধে নাক জুড়িয়ে যায়‌। পুরোপুরি যেন দার্জিলিংয়ের আবহ। স্কুলপড়ুয়া থেকে ক্লাব সংগঠন, সকলেই ওই কমলালেবুর বাগানে বেড়াতে আসছেন। বুধবারও কয়েকটি সংগঠন থেকে পর্যটকরা সেখানে বেড়াতে এসেছেন। 

    নারায়ণ বলেন, ‘‌ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন গাছ নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছি। সবাই বলেন, কাশ্মীর আর দার্জিলিং ছাড়া কমলালেবুর চাষ নাকি করা যায় না। আমি সেই বিশ্বাস ভাঙতে চেয়েছিলাম। কয়েক বছর ধরে কমলালেবু গাছ নিয়ে পরিচর্যা করছি। আমার চেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। বাগানে অসংখ্য কমলালেবু গাছ হয়েছে। তাতে বিপুল ফলন হয়েছে। স্বাদও দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর চেয়ে কিছু কম নয়। প্রতিদিন সকালে বহু মানুষ আমাদের কমলালেবুর বাগান দেখতে আসছেন। কাউকে বারণ করছি না। পর্যটকদের ভিড় দেখে আমার বেশ ভাল লাগছে।’‌ বনগাঁর বাসিন্দা রঞ্জিত মধু–সহ পর্যটকদের একটি দল এদিন অশোকনগরের কমলালেবুর বাগান দেখতে এসেছিলেন। রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‌ভাবতেই পারিনি বাড়ি থেকে এত কাছে কমলালেবুর বাগান দেখতে পাব। সত্যিই অবাক হয়েছি। বাগানজুড়ে কেবল কমলালেবু আর কমলালেবু।’‌  বারাসতের বাসিন্দা পর্যটক রিমিতা সিংহ ও সুমিতা সরকার বলেন, ‘‌দার্জিলিং বেড়াতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। লোকের মুখে শুনে অশোকনগরে চলে এলাম। নিজেদের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বাড়ির কাছে কমলালেবুর বাগান! অসাধারণ। বেশ দার্জিলিং দার্জিলিং মনে হচ্ছে।’‌ 

     
  • Link to this news (আজকাল)