• শিশুদের মগজ ধোলাইয়ে পারদর্শী ছিল জঙ্গি আব্বাস, হরিহরপাড়ার ধৃতের মাদ্রাসায় যাতায়াত সাজিবুলের
    বর্তমান | ০২ জানুয়ারি ২০২৫
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: খারিজি মাদ্রাসায় নিয়মিত যাতায়ত ছিল নওদার ধৃত যুবক সাজিবুল ইসলামের। সেখানেই তার মগজধোলাই চলত। কিছু পরে জেহাদি প্রশিক্ষণও। এমনকী, নাশকতা ঘটানোর কলাকৌশলও তাঁকে শেখানো হতো। এমনতেই গো-বেচারা ছেলে সাজিবুল। ফলে, তাকে জেহাদি পাঠ দিতে বেশি বেগ পেতে হয়নি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের নেতাদের। বাধ্য ছেলের মতো সবকিছু শিখে খুব অল্প সময়েই দক্ষ হয়ে উঠেছিল সাজিবুল। সেই সঙ্গে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাই, মাদ্রাসায় অনেকেই জেহাদি প্রশিক্ষণ নিলেও একমাত্র সাজিবুলকে দিয়ে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটনার পরিকল্পনা নিয়েছিল ধৃত জঙ্গি শাদ রবি। মুর্শিদাবাদ জেলায় জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে বেঙ্গল এসটিএফ যতই তদন্তের জাল গোটাচ্ছে, ততই সামনে আসছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য 

    গোয়েন্দারা আগেই জেনেছেন, আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) শীর্ষ জঙ্গি শাদ রবি সম্পর্কে সাজিবুলের মামাতো ভাই। এই শাদের প্রত্যক্ষ মদতে হরিহরপাড়ার বারুইপাড়া খারিজি মাদ্রাসা খুলেছিল আব্বাস আলি। সেখানে এলাকার শিশু ও কিশোরদের জেহাদি পাঠে উদ্বুদ্ধ করত আব্বাস। তাদের আবাসিক হিসেবে রেখে নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ারও ব্যাবস্থা করা হতো। বিশেষ করে অভাবী পরিবারের শিশুদেরকে টার্গেট করত শাদ ও আব্বাস। আরবি শেখানোর টোপ দিয়ে মাদ্রাসায় নিয়ে আসত। কিছুদিন পর থেকেই শুরু হতো জেহাদি প্রশিক্ষণ। সাত থেকে ১৩ বছরের নাবালকরা ছিল সেই তালিকায়। 

    বেঙ্গল এসটিএফ সূত্রে খবর, ম্যারাথন জেরায়  ক্রমেই ভেঙে পড়ছে সাজিবুল। একের পর এক ফাঁস করে দিচ্ছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। যেমন, সাজিবুলই জানিয়েছে, শিশুদের ভালোবেসে মগজ ধোলাই করতে আব্বাস ওস্তাদ। তাকেও জেহাদি কার্যকলাপে যুক্ত করে ফেলে সে। নওদার দুর্লভপুর এলাকায় সজিবুলের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই যেত আব্বাস ও তার এক বন্ধু মিনারুল শেখ। আব্বাস ও মিনারুলকে ১৭ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে অসম এসটিএফ। এদিকে, গত সোমবার রাতে নওদা থেকে সাজিবুল ও মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে বেঙ্গল এসটিএফ। 

    এসটিএফ সূত্রে খবর, সৌদি আরব থেকে ফিরেই এলাকায় এবিটি সংগঠন বিস্তারের কাজ শুরু করেছিল সাজিবুল। এবিটি’র প্রধান জসিমুদ্দিন আনসারির নির্দেশে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছিল মহম্মদ শাদ রবি। সেই থেকে তলে তলে শুরু হয় জেলায় জঙ্গি কার্যকলাপের বিস্তার। খোলা হয় আব্বাসের খারিজি মাদ্রাসা। শাদ নিজের পিসতুতো ভাই সাজিবুলকে দলে টেনে মগজ ধোলাইয়ের জন্য আব্বাসকেই দায়িত্ব দেয়। কথা মতোও আব্বাসও কয়েক মাসের মধ্যেই সাজিবুলকে মনের মতো গড়ে গড়ে নেয়। 

    সাজিবুল তদন্তকারীদের জানিয়েছে, শাদের যাতায়াত ছিল তার নওদার বাড়িতে। স্লিপার সেল তৈরি সংক্রান্ত সেখানে গোপন বৈঠকও হতো। কীভাবে তৈরি করা হবে, কারা থাকবে স্লিপার সেলে, তার ব্লুপ্রিন্ট একপ্রকার তৈরিই করে ফেলেছিল শাদ। সেই মতো নিজের ভাই সাদ্দামকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসে মুর্শিদাবাদে ঢোকায় সে। তারপর স্থানীয় সাইবার কাফের মালিক আলমগিরকে ধরে সাদ্দামের জন্য ভারতীয় নথি তৈরি করে দিতে বলে সাজিবুল। সাজিবুল সেই কাজ দক্ষ হাতে করার চেষ্টা করে। ফলে, সাদ্দামেরও খুব প্রিয় হয়ে ওঠে সাজিবুল। সময়ে সময়ে জেহাদি প্রশিক্ষণও দিতে থাকে। এরপর জেলায় এবিটি সংগঠনের ছোটখাটো কাজকর্ম দেখতে বলা হয়। সাদ্দাম পরে বাংলাদেশ ফিরে গেলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলত সাজিবুল। বেশ কয়েকবার সাজিবুল তার বন্ধু মোস্তাকিমের ফোন থেকে সাদ্দাম ও শাদের সঙ্গে কথা বলেছে বলেই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে।  
  • Link to this news (বর্তমান)