• সঞ্জয় ছাড়া আর কে? প্রশ্ন তুলছে সিসিটিভি আর ফরেন্সিক রিপোর্ট
    এই সময় | ০২ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের নেপথ্যে ধৃত সঞ্জয় রায় ছাড়া আর কে বা কারা রয়েছে? সিবিআইয়ের চার্জশিট এবং সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্সেস ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) রিপোর্ট দেখে জোরালো ভাবে এই প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। কারণ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সঞ্জয় ছাড়া আর বাকি চার জনকেই চিহ্নিত করা যায়নি।

    এর মধ্যে একজনকে আবার সম্ভাব্য চিকিৎসক বলে মন্তব্য করেও তাঁর পরিচয় জানা যায়নি বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। আর সিবিআইকে দেওয়া সিএফএসএল রিপোর্ট বলছে, নির্যাতিতার শরীর থেকে মেলা নমুনায় কন্ট্যামিনেটেড বা মিশ্রিত ডিএনএ প্রোফাইলে নির্যাতিতা ও সঞ্জয় ছাড়াও আরও চার জন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্রোমোজ়োম রয়েছে। অতএব প্রশ্ন, আর কে?

    আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, সঠিক অপরাধীকে যাতে সহজে চিহ্নিত করা না–যায়, সে জন্য নমুনা সংগ্রহের সময়ে সেটি কন্ট্যামিনেট করা হয়েছিল। অন্য একটি অংশের বক্তব্য, বাকি যাদের ডিএনএ-র অস্তিত্ব মিলেছে ফরেন্সিক পরীক্ষায়, তার সঙ্গে সন্দেহভাজন কারও ডিএনএ কি মিলিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি সিবিআই? সেই সূত্রেই উঠে আসছে ফের সিসিটিভি ফুটেজের প্রশ্ন, যেখানে সঞ্জয় ছাড়া বাকি সকলের ক্ষেত্রে ‘শনাক্ত করা যায়নি’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে চার্জশিটে।

    সিবিআইয়ের নথি বলছে, রাত ২.৩০ থেকে ভোর ৫.৫১— প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। এর মধ্যে সঞ্জয়-সহ মোট পাঁচ জনকে অন্তত ৬৮ বার যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। আরজি করের ইমার্জেন্সি ভবনের চারতলায় চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুমের (ক্রাইম সিন) দিকে যাওয়ার রাস্তায় লাগানো একমাত্র সিসিটিভি ক্যামেরায় এই ফুটেজ ধরা পড়েছে।

    তাতে সঞ্জয়কে তিন বার ঢুকতে-বেরোতে দেখা গিয়েছে। আর তাকে বাদ দিয়ে যে চার জনকে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজনের আবার গলায় স্টেথোস্কোপ দেখা গিয়েছে যা দেখে তাঁকে চিকিৎসক বলেই মনে করা হচ্ছে বলে নথিতে উল্লেখ। কিন্তু তাঁর এবং বাকি অন্য তিন জনের পরিচয়ই এত দিনে বের করে উঠতে পারেননি তদন্তকারীরা।

    জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে অনিকেত মাহাতোর বক্তব্য, ‘পরিচয় জানা যাবে না, এটা আবার হয় নাকি? হাসপাতালে কর্মরত প্রত্যেকের ডিউটি রস্টার তো রয়েইছে হাসপাতালের নথিতে। ফুটেজ দেখিয়ে আমাদেরও তো জিজ্ঞেস করা যেতে পারত। হাসপাতালের লোকজনের সঙ্গে ফুটেজ দেখিয়ে কথা বললেই পরিচয় জানা যেত।’

    চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি কৌশিক চাকীর প্রশ্ন, ‘কলকাতা পুলিশ যেখানে তদন্ত শেষ করেছিল, তার পর সিবিআই তা হলে কি তদন্তে আর কোনও অগ্রগতিই করেনি?’ তাঁর দাবি, ৯ অগস্ট মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার দিন দশেকের মধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজের বিস্তারিত তথ্য হাতে এসে গিয়েছিল সিবিআইয়ের। আর সিএফএসএলের যে রিপোর্টে কন্ট্যামিনেটেড ডিএনএ-র কথা বলা হয়েছে, তা কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে জমা পড়ে গিয়েছিল ২১ অগস্ট।

    সেই সিএফএসএল রিপোর্টে নির্যাতিতার স্তনবৃন্ত বা নিপল, পায়ু বা অ্যানাস এবং ভালভা বা যোনিদ্বারের সোয়াব নমুনায় ‘মাল্টিপল অটোজ়োমাল এসটিআর জেনেটিক প্রোফাইল’-এর ইঙ্গিত মিলেছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, মোট সাত জনের ডিএনএ রয়েছে যার মধ্যে নির্যাতিতা-সহ দু’টি ডিএনএ মহিলার ও সঞ্জয়-সহ পাঁচটি ডিএনএ পুরুষের। অথচ বাকি পাঁচ জনকে চিহ্নিত করা যায়নি বলে সিবিআই চার্জশিটে উল্লেখ করে গত ৭ অক্টোবর। অর্থাৎ সিসিটিভি ফুটেজ ও সিএফএসএল রিপোর্ট মেলার প্রায় দেড় মাস পরেও কারও পরিচয় জানতে পারেনি সিবিআই।

  • Link to this news (এই সময়)