• কেন কাস্তে ধরছে না মেহনতি জনতা, প্রশ্ন রাজ্য কমিটিতেই
    এই সময় | ০২ জানুয়ারি ২০২৫
  • কমিউনিস্ট পার্টির মূল জনভিত্তি গরিব, মেহনতি, প্রান্তিক জনতা। ২০১১ সালে এই জনভিত্তিতেই ব্যাপক ধস নামায় বাংলায় ক্ষমতাচ্যুত হয় বামেরা। ২০১১–এর পর থেকে সিপিএম দ্রুত ক্ষয়িষ্ণু হতে শুরু করে, একই সঙ্গে দল‍ের সদস্য সংখ্যাও কমতে শুরু করে। এক সময়ে তিন লক্ষের বেশি সদস্য থাকা বঙ্গ সিপিএমের সদস্য সংখ্যা এখন এক লাখের আশপাশে রয়েছে।

    বাংলায় ক্ষমতা হারানোর পরে ১৪ বছর কেটে গেলেও সিপিএম গরিব জনতার মধ্যে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারছে না। ব্রাঞ্চ কমিটি থেকে এরিয়া কমিটি, জেলা কমিটিতেও গরিব জনতার প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে না। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদ্যসমাপ্ত বৈঠকে সন্দেশখালির নেতা নিরাপদ সর্দার তাঁর এই পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন।

    সূত্রের খবর, সিপিএমকে চাঙ্গা করতে গরিব খেতমজুর, পরিযায়ী শ্রমিক, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত জনতার মধ্যে দলের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের জানিয়েছেন নিরাপদ। এই অংশের সদস্যদের কমিটিতে জায়গা দেওয়া প্রয়োজন বলেও তাঁর পর্যবেক্ষণ। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখাল‍ির তফসিলি জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে এসে নিরাপদ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছেন।

    সন্দেশখালির বিধায়কও ছিলেন তিনি। ২০২৪–এর লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে তিনি বামফ্রন্ট প্রার্থী হয়েছিলেন। এখন তিনি সিপিএমের খেতমজুর সংগঠনের নেতা। দলের সদস্যদের শ্রেণি চরিত্র নিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা নিরাপদ সর্দারের এই পর্যবেক্ষণ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্যদের মধ্যে নতুন চর্চার খোরাক জুগিয়েছে।

    ২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচনের পর্যালোচনা দলিলে সিপিএম উল্লেখ করেছিল, 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার'–সহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকারের একাধিক প্রকল্প জনতার মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে গরিব, নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত জনতার মধ্যে মমতার জনমুখী প্রকল্পগুলি তৃণমূলের সমর্থনের ভিত্তিকে পোক্ত করেছে বলেও সিপিএমের নির্বাচনী পর্যালোচনায় উঠে আসে। এই কারণে সিপিএম নেতৃত্ব সরাসরি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’–এর মতো প্রকল্পের সমালোচনা করার লাইন পরবর্তী সময়ে ত্যাগ করে।

    এই পরিস্থিতিতে গরিব, প্রান্তিক জনতার মধ্যে সিপিএমের সদস্য সংখ্যা বাড়ছে না— এটা দলীয় নেতারা বুঝতে পারলেও কী ভাবে এই ঘাটতি পূরণ হবে, তার কোনও রূপরেখা রাজ্য কমিটির সভায় দেখাতে পারেননি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। যদিও কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিকদের মধ্যে আরও প্রচার চালাতে আগামী ২০ এপ্রিল সিটু ও প্রাদেশিক কৃষক সভার ব্যানারে বামেদের ব্রিগেড আহ্বান করা হয়েছে। অতীতে এমন ব্রিগেড ডাকা হয়নি।

    গরিব জনতাকে সিপিএমের সদস্য করতে না–পারা, কমিটিতে তাদের নিয়ে আসতে না–পারার ব্যর্থতার পাশাপাশি সাংগঠনিক নির্বাচনে নতুন জেলা কমিটি, এরিয়া কমিটিতে মোট সদস্য সংখ্যা কত হবে, কোন বয়সের কত সদস্য হবে, মহিলা সদস্য কত হবে— তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। এই কাঠামো রক্ষা করতে গিয়ে তুলনামূলক ভাবে প্রবীণ, কিন্তু এখনও সক্রিয় এমন সদস্যদের এরিয়া কমিটি থেকে বাদ দিতে হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য।

  • Link to this news (এই সময়)