• পাক-মদতে বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে জাল নোট!
    এই সময় | ০২ জানুয়ারি ২০২৫
  • জাল পাসপোর্টের যে বিশাল চক্রের হদিস মিলেছে, তার শিকড় বাংলাদেশে গেঁথে রয়েছে বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। এই চক্রের সদস্যরা পর পর ধরা পড়ছে পুলিশের জালে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এর মধ্যে জাল নোটের কারবারিরা নজরদারি এড়িয়ে যাচ্ছে না তো?

    সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটভূমিকায় পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীদের যোগ বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে। কার্যত, শেখ হাসিনাকে সরানো থেকে শুরু করে, সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠে আসছে পড়শি দেশ থেকে, তার পিছনে পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীর মদত দেখছেন ভারতীয় গোয়েন্দাদের একাংশ।

    আর এই রাজনৈতিক সমীকরণের প্রেক্ষাপটে জাল ভারতীয় নোট পাচারের চক্র আরও সক্রিয় হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি উঠে এসেছে। অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবাধে ঢুকছে জাল নোট। রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তান আইএস (জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট) ও বাংলাদেশের জামায়েতের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে সেই নোট ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গে।

    পুলিশকর্তাদের দাবি, আগে পাকিস্তানে জাল ভারতীয় নোট তৈরি হতো। সেই নোট বাংলাদেশ ঘুরে ঢুকত ভারতে। এখন বাংলাদেশেও জাল নোট ছাপানোর জন্য তৈরি হয়েছে ‘স্যাটেলাইট ম্যানুফ্যাকচার’।

    এসটিএফ ও রাজ্য পুলিশের তদন্তকারীদের দাবি, পাকিস্তানের করাচি, ইসলামাবাদ মূলত জাল নোটের উৎপত্তিস্থল। সেই জাল নোট বাংলাদেশ, নেপাল হয়ে এ রাজ্যে আসছিল। এ বার পাকিস্তান থেকে সিন্থেটিক পেপার ও থ্রেড (নোটের মধ্য দিয়ে যে লাইন থাকে) তৈরি করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশেই টাকা ছাপানোর মেশিনে জাল নোট ছাপিয়ে ও কাটিং করে তা পাঠানো হচ্ছে সীমান্তে।

    গোয়েন্দাদের দাবি, ভারতে এই জাল নোট প্রাথমিক ভাবে লেবারদের পেমেন্ট এবং কাঁচামাল, গরু ও কাপড়ের হাটে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে প্রচুর নগদ টাকার লেনদেন হয়। বান্ডিল বান্ডিল নোটের মধ্যে কোনটা জাল তা বোঝা বেশ মুশকিল। পাচারকারীরা তারই সুযোগ নিচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁরা জানতে পেরেছেন, জাল নোট ছড়ানোর জন্য এ রাজ্যের ছোট বাজারও নাকি এ বারে টার্গেট করা হয়েছে।

    রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের দাবি, কাঁটাতারে মোড়া সীমান্তের ও পারে বাংলাদেশের দিকে যে সব গ্রাম রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের এই জাল নোটের কেরিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে পাচার চক্রে মাথারা। এই কেরিয়াররা এক লক্ষ টাকার জাল নোট পাচার করলে মোটামুটি ভাবে পাঁচ হাজার টাকা পায়। আবার টাকার অঙ্ক বাড়লে কখনও আট, কখনও দশ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পায়। আর এরপরেই উঠে আসছে ‘ঢোলক’ বা ‘ঢোলবাজ’–দের ভূমিকা।

    তারা কারা?

    গোয়েন্দা কর্তা মুচকি হেসে জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে যাদের হাতে সেই জাল নোট তুলে দেওয়া হচ্ছে, স্থানীয় ভাবে তারাই ঢোলক–ঢোলবাজ নামে পরিচিত। এরা ১০ লক্ষ টাকার জাল নোটে গড়ে এক লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নেয়। সীমান্তে কখন নিরাপত্তারক্ষীদের ডিউটি চেঞ্জ হয়, তার খোঁজ রাখে ঢোলকেরা। ওই ডিউটি চেঞ্জের সময়ে ফাঁকতালে, সন্তর্পনে এরা সীমান্ত থেকে জাল নোট তুলে নিয়ে আসে। তার জন্য কখনও ছদ্মবেশও নিতে দেখা যায় তাদের।

    এই ঢোলকরা মূলত মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, কোচবিহারের বাসিন্দা। অনেকেরই বর্ডারের এ পার এবং ও পার — দু’পারেই আত্মীয় রয়েছে। শেল্টার হিসেবে এরা তা ব্যবহার করে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তার দাবি, ‘জঙ্গি গোষ্ঠীই এই চক্রের মূল অপারেটর। এই চক্র চেনের মতো কাজ করলেও, এক সদস্য অন্য জনকে চেনে না। ফলে কাউকে গ্রেপ্তার করলেও, চক্রের মূলে পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।’

    এসটিএফের গোয়েন্দাদের দাবি, এই জাল নোট ভারতে পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি রুট ব্যবহার করা হচ্ছে। একটা রুট — ঢাকা থেকে নেপাল, তারপরে সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি, নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, শিলিগুড়ি হয়ে সোজা কলকাতার ধর্মতলা বা হাওড়া–শিয়ালদহ। আবার, বাংলাদেশের রাজশাহির সীমান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মালদহের কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর হয়ে ধর্মতলা বা হাওড়া। এ ছাড়াও, বাংলাদেশ থেকে মুর্শিদাবাদের ওমরপুর–রঘুনাথগঞ্জ–সুতি পেরিয়ে সামশেরগঞ্জের হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছচ্ছে সেই নোট। এই পথেই বিভিন্ন হাটে বিলিয়ে যাচ্ছে তা।

  • Link to this news (এই সময়)