রাজ্যের নাম সিকিম হলে কী হবে, রাবাংলার সঙ্গে দার্জিলিংয়ের একটা অদ্ভুত মিল। দুটোই পাহাড়ি জনপদ। সারা বছর কুয়াশায় মোড়া। ফারাক কেবল, দার্জিলিং ব্রিটিশদের হাতে গড়ে ওঠা কলোনি। আর সিকিমের রাবাংলা, নামচি–সিংতাম–পেলিংয়ের মাঝে গড়ে ওঠা একটি পাহাড়ি জনপদ।
দার্জিলিংয়ে সূর্যোদয় দেখে যাঁদের মন ভরে না, তাঁরা শিলিগুড়ি থেকে উজিয়ে চলে যান সোজা পেলিংয়ে। অথচ তার আগেই পড়ে রাবাংলা। সেখানেও সূর্যোদয় ভারী মনোরম। অথচ স্রেফ প্রচার এবং সরকারি নজরদারির অভাবে রাবাংলার নাম পর্যটকদের কাছে তেমন একটা পরিচিত নয়। সিংতাম থেকে পর্যটকেরা সরাসরি পেলিং চলে যান। পথে রাবাংলায় চা খেয়ে দু’পাক ঘুরে নেন। তবে রাত কাটান না।
অথচ রাংবাংলায় অনেক বেশি হোটেল হয়েছে। রাবাংলার পরিচিতি বুদ্ধ পার্ক–এর জন্য। পর্যটকদের ভিড় সেখানে লেগেই থাকে। এ বার সেখানে ‘লাইট শো’য়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। গত বছর এপ্রিলে রাবাংলায় ‘কনক্লেভ’ হয় পর্যটকদের নিয়ে। কলকাতা এবং নেপাল থেকেও প্রতিনিধিরা যোগ দেন। প্রচারের ঘাটতি মেটাতেই পযর্টন ব্যবসায়ীদের সংগঠনকে নিয়ে জোট বেঁধেছে সিকিম রাজ্য পর্যটন দপ্তর।
ভালেডুঙ্গা থেকে রাবাংলা পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে রোপওয়ে। রাফাং বনাঞ্চলে ‘জঙ্গল সাফারি’র ব্যবস্থা হচ্ছে। মাউন্টেন বাইকিং, ম্যারাথন–সহ একগুচ্ছ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে সিকিমের পূর্বতন চোগিয়াল রাজাদের জাঙ্গল সাফারির রাস্তাটিও। বিপজ্জনক রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত করার অভিজ্ঞতা যেন এক অ্যাডভেঞ্চার।
রাবাংলা ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভাপতি মনীশ কৈরালা বলেন, ‘অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনে সিকিমের তুলনা হয় না। এক-একটি এলাকায় আলাদা রকম অভিজ্ঞতা।’ মনীশের দাবি, ‘রাবাংলা পর্যটক কেন্দ্র হিসাবে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর জায়গা নয়। চোগিয়াল রাজাদের আমলের জাঙ্গল সাফারির রাস্তাটি রাজ্য সরকারের মাধ্যমে সংস্কার করানো হয়েছে। সূর্যোদয় দেখার নতুন ভিউ পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে। কয়েক বছরে ভোল বদলে যাবে এই এলাকার।’ কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরার কথাই ভাবেননি ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট কমিটির কর্তারা, পর্যটকদের পকেটের কথাও ভেবে রেখেছেন তাঁরা।
রাবাংলায় হোটেল এবং হোম স্টে মিলিয়ে প্রায় ৭০টি রাত্রিবাসের জায়গা রয়েছে। মার্চ–এপ্রিলে পর্যটন মরশুমে পর্যটকদের ছাড়ের ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানান মনীশ। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালও বলেছেন, ‘পর্যটন ব্যবসায়ীরাও সিকিমে বেড়ানোর তালিকায় এখন রাবাংলার নামও যোগ করেছেন।’