• ‘পেনশনে প্রভাব’ থেকে ‘বদলির পরেও দায় নিতে হবে’, বছরের শুরুতেই প্রশাসনে জোর ঝাঁকুনি মমতার
    এই সময় | ০২ জানুয়ারি ২০২৫
  • জমির জবরদখল নিয়ে কড়া অবস্থান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক দিকে জবরদখলের ‘কারিগর’-দের যেমন শুনিয়ে রাখলেন, ‘প্রয়োজনে ইডি-সিবিআইয়ের মতো সম্পত্তি ক্রোক করতে হবে।’ একই ভাবে বুঝিয়ে দিলেন, কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে কোনও অফিসারের এই সব কাজের সঙ্গে কোনও যোগ প্রমাণ হলে। প্রভাব পড়বে পেনশনেও। মমতা জানিয়েছেন, আগের কোনও অফিসার করে গিয়ে থাকলে তার পেনশনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হতে পারে। স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না। জবর দখলকারীদের ধরতে আইএএস, আইপিএস এবং ডব্লুবিসিএস অফিসারদের নিয়ে কমিটিও তৈরি করার নির্দেশ দেন মমতা। মাথায় থাকবেন স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। তিনি মুখ্যসচিবকে সমস্ত রিপোর্ট দেবেন। মুখ্যসচিবের কাছ থেকে বিস্তারিত জানবেন মুখ্যমন্ত্রী।

    এ দিন মিটিংয়ের একেবারে শুরুতেই মমতা বলেন, ‘সরকারি জমির জবরদখল বরদাস্ত করা হবে না। এ বার জবরদখল হলে এলাকার এসপি, আইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ডিএম, বিডিওদের ছাড় নেই স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে কোনও মন্ত্রী, কাউন্সিলার, পঞ্চায়েতের সদস্যরও রেহাই নেই এই ঘটনায় নাম জড়ালে।

    মমতার দাবি, অনেকেই বেআইনিভাবে জমি দখল করেছ ফ্ল্যাট বানিয়েছে। তা বিক্রি করেও চলে গিয়েছে। খুঁজে বের করা হবে সকলকেই। জরিমানা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, যিনি বিল্ডিংয়ের পারমিশন দিয়েছেন, কোপের মুখে পড়তে হবে তাঁকেও। জেলার পুলিশ নয়, যা ব্যবস্থা নেওয়ার রাজ্য পুলিশ নেবে বলেও এ দিন জানিয়ে দেন মমতা।

    সরকারি জমির উপর বেআইনি ভাবে যাঁরা বসবাস করছেন, দোকান রয়েছে, তাঁদেরও পেনাল্টি দিতে হবে বলে জানান মমতা। জুন অবধি সময় দেওয়া হবে। তৈরি হবে নয়া পলিসি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, যাঁরা এগুলি নিয়েছেন, তাঁদের কাছে বৈধ কাগজ নেই। যে কাগজ পেয়েছেন, তাও বেআইনি। যাতে বৈধ কাগজ পেতে পারেন, তাই এই ব্যবস্থা।

    ‘বাংলা বাড়ি’ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘আপনাদের সার্ভের পর যদি কোনও ভুল বেরোয় যে জেলা, বিডিও, আইসি, ডিপার্টমেন্ট, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে।’ রাজীব কুমারকে নির্দেশ দেন, প্রতিটা ডিপার্টমেন্টের জন্য অ্যাপ তৈরি করতে। মমতা বলেন, ‘ব্যাঙ্কের টাকাও হ্যাক হয়ে যাচ্ছে, ব্যাঙ্ক নিজেরটাও ঠিকমতো দেখে না। অ্যাপ থাকলে আমি ধরতে পারব, কে কোথায় দুষ্টুমি করছে।’ এই বক্তব্য শুনে ফিরহাদ হাকিম পরামর্শ দেন, সার্ভেও অ্যাপে আপলোড করা গেলে ভালো হয়। তাতে কে সমীক্ষা করেছেন তা জানা যাবে। কেউ নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। ‘ভালো প্রস্তাব’, বলেন মমতা। জানিয়ে দেন, খারাপ হলেই সরকারের দায়িত্ব আর যে অপরাধ করবে সে পালিয়ে যাবে, তা চলবে না।

    ফিরহাদের পাশেই বসে ছিলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বলেন, ‘রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি বা রেরায় আমরা পঞ্চায়েত ও আরবান ডেভেলপমেন্টকে বলেছি একটা পোর্টাল করতে। বেআইনি নির্মাণ রুখতে রেরাকে এগিয়ে আসতে হবে।’ এ বিষয়েও মুখ্যসচিবকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন মমতা।

    পুলিশের উপর প্রথম থেকে এ দিন উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘পুলিশ দুই থেকে তিন বছর একটা সার্ভিসে থাকে। নির্বাচন কমিশন নিয়ম করে দিয়েছে তিন বছর পর পর ট্রান্সফার করতে হবে। এই নিয়মের জালে ফেঁসে গিয়েছি। জেলাশাসক হোক বা পুলিশসুপার, ভেবে নিচ্ছেন, তিন বছরের কাজ। বেশি সক্রিয় হচ্ছেন না। আজ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তাঁর সময়ে যদি কোনও বেআইনি কাজ হয়, সে যেখানে থাকুক ধরা হবে। বারবার বলার পরও বদলির সময় নতুন দায়িত্বে যিনি আসছেন, তাঁকে কাজ বুঝিয়ে যাচ্ছেন না।’ মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দেখে নিতে বলেন তিনি। এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বাম সরকারকে তোপ দেগে তিনি জানান, আগের সরকার দখল করে গিয়েছে, ঋণের বোঝা চাপিয়ে গিয়েছে। আর তা শোধ করতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে।

  • Link to this news (এই সময়)