পয়লা জানুয়ারিতে আয়ের সর্বকালীন রেকর্ড ছাপিয়ে গেল শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্ক। একদিনে রেকর্ড আয় হয়েছে কর্তৃপক্ষের। বুধবার ১২ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ৮ হাজার ৯০০ জন পর্যটক সাফারি পার্কে ঘুরতে এসেছিলেন। পর্যটকদের ব্যাপক চাহিদার জন্য এ দিন সাফারির সংখ্যাও বাড়াতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। রাজ্য জু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরীর বক্তব্য, ‘সাফারি পার্কে আমরা অনেক নতুন সাফারি যোগ করেছি। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে নতুন অ্যাডভেঞ্চারও যোগ করা হয়েছে। তাই পার্কে পর্যটকদের সংখ্যাও বাড়ছে।’
সিকিমে বিপর্যয়ের পর কালিঝোড়ায় থাকা পিকনিক স্পটগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে দুধিয়ার চর, রোহিণী লেক, মধুবন পার্ক–সহ ফুলবাড়ি ব্যারাজ এলাকায় সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছিল। মধুবন পার্কে এক হাজারের বেশি মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। দুধিয়ার চরে এই সংখ্যা ২–৩ হাজার। মূলত পিকনিক করতেই এখানে এসেছিলেন সকলে। অন্যতম পিকনিক স্পট হিসেবে উঠে এসেছে ফুলবাড়ির মহানন্দা ব্যারাজ। এখানে জমায়েত পাঁচ হাজারের।
এ দিন ভিড়ে ঠাসা ছিল গোরুমারা। লাটাগুড়ির জঙ্গল সাফারির সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছিল বুধবার। এর প্রভাব পড়ল গোরুমারাতে। ইকো টুরিজম রেঞ্জে পর্যটকের ভিড় জমতে শুরু করে সকাল থেকে। সকালের দুই শিফটের পর দুপুরের এবং বিকেলের শিফটও ভরে যায়৷ টিকিটও শেষ হয়ে যায়। অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান।
গোরুমারার যাত্রাপ্রসাদ, চাপড়ামারি, রামশাই, মেদলা, চুকুচুকির নজরমিনারগুলি দিনভর ভিড়ে ঠাসা ছিল। গোরুমারার ইকো টুরিজম রেঞ্জ থেকে দিনে ২০টি করে জিপসি পর্যটকদের বিভিন্ন নজরমিনারে নিয়ে যায়। এখানকার রেঞ্জার সুদীপ দে বলেন, ‘নজরমিনারের টিকিট আগেভাগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। নিদিষ্ট সংখ্যা মেনেই টিকিট দেওয়া হয়েছে।’
জিপসি ছাড়াও মোষের গাড়ি করে রামশাই থেকে পর্যটকেরা গোরুমারার মেদলা নজরমিনারে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ পান। লাটাগুড়ির ঐতিহ্যবাহী মহাকালধামেও বহু মানুষ বুধবার ভিড় করেছিলেন। মূর্তিতেও ঢুঁ মেরেছেন অনেকে। মূর্তি রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন–এর সম্পাদক তজমুল হক বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরেই মূর্তিতে সব রিসর্ট পরিপূর্ণ ছিল। বছরের গোড়াতেও সেই ছবি।’ ক্রান্তি গজলডোবা ক্যানেল রাস্তাতেও দেদার ভিড়। রোদ মেখে নৌকোবিহার করেছেন অনেকে।
কোচবিহারে বছরের প্রথম দিনে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বেশি আয় করল বন দপ্তর। এ দিন রসিকবিল পর্যটন কেন্দ্রে ঢল নামে পর্যটকদের। প্রায় ১৬ হাজার পর্যটক এসেছিলেন। ২,১০০ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। শীত পড়লেই রসিকবিলের ঝিলে ভিড় করে পরিযায়ী পাখির দল। সেটার টানেও মানুষ আসেন। কোচবিহার বন বিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রতি বছর এ দিনটায় ভিড় হয়। নয়া আকর্ষণ শিশু উদ্যান। প্রায় ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া এই উদ্যানে বছরের প্রথম দিনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। শিশুদের চাহিদা মতো আকর্ষণীয় খেলার সামগ্রী নিয়ে আসা হবে শিশু উদ্যানে।
বছর শেষ ও শুরুর দিনটা বনভোজনের হিড়িক পড়ে যায় উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায়। একটা সময় রায়গঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী কুলিক বনাঞ্চলে বসত বনভোজনের আসর। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কুলিক বনাঞ্চলে চড়ুইভাতি এখন নিষিদ্ধ। এখন কুলিক নদীর ধারে শিয়ালমণি এলাকা বনভোজনের জন্য সুখ্যাতি অর্জন করেছে।
শুধু এই এলাকাই নয়, রায়গঞ্জের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের জমিদারবাড়ি এলাকায় নাগর নদীর ধারেও সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল পিকনিকের জন্য। বনভোজনে আসা সুবীর দে বলেন, ‘প্রতিবারই আসি। এ বারও মিস করিনি। এ দিনটায় খুব আনন্দ করি।’ এখানে উপস্থিত অনিন্দিতা সরকার বলেন, ‘বছরের প্রথম দিন সবাই এসেছেন। খুব আনন্দ হচ্ছে।’
মালদাতেও মূলত চড়ুইভাতির হুল্লোড়। একইসঙ্গে ভিড় বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানে। ইংরেজবাজার ব্লকের ঐতিহাসিক গন্তব্য গৌড়ে ভিন্ জেলা থেকেও ঘুরতে আসেন বহু পর্যটক। বারোদুয়ারি, দাখিলদরওয়াজা, চামচিকা মসজিদ–সহ একাধিক পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখার ক্ষেত্রেও পর্যটকদের ছিল চরম উৎসাহ। মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঐতিহাসিক জায়গাগুলিকে বেছে নেন বনভোজনে আসা মানুষজন।
গৌড় এলাকায় সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে ঘোড়া গাড়িতে চেপে ঘোরার হিড়িক ছিল দেখার মতো। এখানে সবমিলিয়ে হাজার দুয়েক মানুষ এসেছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থেকে এখানে এসেছিলেন এক গৃহশিক্ষক ও তাঁর ছাত্ররা। গৃহশিক্ষক বৈশিষ্ট্য মজুমদার বলেন, ‘ফাইভ থেকে টেন ক্লাসের পড়ুয়াদের অনেকে গৌড় দেখেনি। তাই পিকনিকের পাশাপাশি প্রাচীন দ্রষ্টব্য ঘুরিয়ে দেখাতে এসেছি।’ গাজল ব্লকের আদিনা মসজিদ–সহ ডিয়ার ফরেস্টও ছিল অনেকের গন্তব্য। অরণ্যে হরিণ ও পরিযায়ী পাখি দেখে পর্যটকরা সময় কাটিয়েছেন। এখানকার কর্তারা জানিয়েছেন, বছরের প্রথম দিনে প্রায় এক হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।