• 'চটিচাটা' কটাক্ষ করা শিল্পীদের বয়কট! কুণালের ডাককে পাত্তাই দিলেন না অভিষেক
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০২ জানুয়ারি ২০২৫
  • আরজিকর ইস্যুতে যারা আন্দোলনে নেমে মুখ্য়মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যারা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন সেই শিল্পীদের যাতে তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে জায়গা দেওয়া না হয় তা নিয়ে সওয়াল করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এমনকী এক্স হ্যান্ডেলে ফলাও করে লিখেছিলেন নানা কথা। কার্যত বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন কুণাল। তবে বৃহস্পতিবার নাম না করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় স্পষ্টতই জানিয়ে দিলেন এই বয়কটের বিরুদ্ধে তিনি। এমনকী কুণালের দাবির পাশে দাঁড়ানো তো অনেক দূরের কথা, দলের অবস্থানের সঙ্গে কুণালের ‘ব্যক্তিগত’ টুইটের যে কোনও সম্পর্ক নেই সেকথাও জানিয়ে দিলেন তিনি। 

    অভিষেক জানিয়েছেন, কোথায় কাকে দিয়ে গান গাওয়াবে, কখন গাওয়াবে, কে গান গাইবে, আমি জোর করে কারোর মাথায় চাপাতে চাই না। আমি কোথা দিয়ে হাঁটব, চলব, সেটা আমার সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা সকলের আছে। 

    এখানেই শেষ নয়, কুণালের নাম না করলেও কুণালের বক্তব্য যে দলের অবস্থান নয় সেটা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন অভিষেক। তিনি জানিয়েছেন, পার্টির তরফে কেউ বলেছে? কোনও নেটিশ দেখেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বা আমি জেনারেল সেক্রেটারি কিছু বলেছি? 

    এমনকী বয়কট হওয়া এক শিল্পী অভিষেককে ফোন করেছিলেন বলেও খবর। অভিষেক বলেন, যেহেতু উনি ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছিলেন, তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে মেলা কমিটির সদস্য-সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। কথা বলি। যিনি ফোন করেছিলেন তিনি শো করেছেন বলে পরে জানতে পারি। এমনকী রাত দখলের যে কর্মসূচি হয়েছিল তাকে তিনি সমর্থন করেন বলেও জানিয়েছেন।

    এদিকে যে কুণাল কিছুদিন আগেও অভিষেকের জয়গান করতেন, আগামীদিনের মুখ্য়মন্ত্রী হিসাবে অভিষেককে তুলে ধরতেন সেই কুণালের বক্তব্যকে কার্যত পাত্তাই দিলেন না অভিষেক। 

    'আর জি করের ঘটনা অতি জঘন্য। দোষীর ফাঁসির হোক। মুখ্যমন্ত্রী, দল, আমরা সবাই খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদী। কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল কয়েক ঘন্টার মধ্যে। সিবিআই তদন্ত মান্যতা দিয়েছে। বিচার চলছে। সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত ও বিচারে অসঙ্গতি পাননি। সব পক্ষের আইনজীবী সেখানে ছিলেন। কিন্তু কিছু বাম, অতি বাম, অন্ধ তৃণমূল বিরোধী এই সময় মিথ্যা, কুৎসা, ফেক অডিও, রাজনৈতিক নাটকবাজি করে মানুষের আবেগকে বিভ্রান্ত করে, একাংশের মিডিয়ার সাহায্যে, নিজেদের ধান্দায়। জঘন্য ভাষা, রোজ নাটক, সরকারের ইস্তফার দাবি, বাংলাদেশের সরকার বদলের সঙ্গে তুলনা চলছিল।

    'এই প্রবল মিথ্যার ঝড় এবং আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী, আমরা দু-চারজন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সদস্যরা পাল্টা যুক্তি, ন্যায্য কথা ও জবাব নিয়ে সাধ্যমত লড়ে গিয়েছি। তাতে আমাদের ভয়ঙ্কর ব্যক্তি আক্রমণ ও বহু চোরাস্রোত সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, আমাদের দলের অনেক নেতা, নেত্রী, জনপ্রতিনিধি তখন নীরবে বসে জল মাপছিলেন। দলের সমর্থনে বা কুৎসার বিরুদ্ধে তাঁদের মুখে একটি কথা, এমনকি পোস্টও দেখা যায়নি। ইস্যুর ঝড়টা একটু কমে এলে এঁরা আবার জেগে উঠে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরে আসেন। তা আসুন। কিন্তু সমস্যা হল, এখন তাঁদের অনেকের মঞ্চে কিছু শিল্পী, এমনকি ডাক্তারকেও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ওই তিনমাস চূড়ান্তভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও সরকার বিরোধিতা করেছেন। কেউ রাস্তায়, কেউ টিভিতে। যে ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে শামিল, কোনো বিবৃতিও ছিল না পাল্টা, তাঁরা নিজেদের তৃণমূল দেখাতে মরিয়া। যে শিল্পী 'চটিচাটা' বলে সরকারপন্থীদের আক্রমণ করতেন, এখন শীতের জলসার পোস্টারে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে তাঁর ছবি। আমার বক্তব্য, এটা গণতান্ত্রিক রাজ্য। যে কেউ পারফর্ম করতে পারেন। কোনো বাধা নেই। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেন এঁদের ডাকা হবে? আসলে যাঁরা অগস্টের পর থেকে লড়াইটাতে ছিলেন না, সেই ভয়ংকর আক্রমণের মুখে পড়েননি, জল মাপছিলেন, তাঁরা বোধহয় এই যন্ত্রণাটা বুঝতে পারছেন না। তিনমাস আগে 'চটিচাটা', সরকার ফেলে দেবো, বাংলাদেশের মত পালাবে বলা শিল্পীদের আর যাই হোক, এখন তৃণমূল নেতাদের বিনোদনের মঞ্চে ডাকা যেতে পারে না। ওঁরা ডাকলেই আসবেন। কিন্তু ওই কজনকে তৃণমূল কর্মীরা বয়কট করুন। এবার পাড়ার জলসায় ওই কজনের কোনো জায়গা থাকা উচিত না। তৃণমূলপন্থীদের অনুষ্ঠানে তো নয়ই।'

    তবে অভিষেক এদিন মুখ খুলতেই কুণাল অবস্থানে কিছুটা অনড় থেকেও বলেন, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। এমনকী চেয়ারপার্সন যা বলবেন সেকথা তিনি শুনবেন বলেও জানিয়েছেন। 
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)