• শিলিগুড়িতে মা ও ছেলের রহস্যমৃত্যু, অসুস্থ মেয়ে, দুর্ঘটনা না নেপথ্যে অন্য কিছু?
    এই সময় | ০২ জানুয়ারি ২০২৫
  • ঘর থেকে মা ও ছেলের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল শিলিগুড়ির উত্তরায়ণ উপনগরীতে। বৃহস্পতিবার ওই এলাকার একটি বাড়িতে থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে মহিলার মেয়েকে। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য মেয়েকে উত্তরায়ণেরই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, ঘরের বাতাস বিষাক্ত হয়েই ওই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের বক্তব্য, ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরে বাকিটা বোঝা যাবে।’

    পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতদের নাম তিথি দাস (৩৮), তেজস দাস (৮)। অসুস্থ বছর ১৯-এর তরুণী তেজল দাস চিকিৎসাধীন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাংলোটি বালি, পাথরের ব্যবসায়ী সুজিত দাসের। মৃতরা তাঁরই স্ত্রী এবং ছেলে। অসুস্থ তাঁর মেয়ে। এ দিন সকালে বাড়ির পরিচারক এসে দেখতে পান দরজা ভেজানো রয়েছে। ভেতরে ঢুকে তিনি দেখেন একটি ঘরে খাটের উপর পড়ে রয়েছেন তেজস এবং নীচে বাথরুমের কাছে পড়ে রয়েছেন তিথি দাস। তেজালকেও প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ঘর থেকেই। এর পরেই তিনি সুজিত দাসকে ফোন করে পুরো বিষয়টি জানান। ফোন পেয়ে সুজিত উত্তরায়ণ পুলিশ ফাঁড়িতে বিষয়টি জানান। ওই সময় সুজিত বাড়িতে ছিলেন না বলে সূত্রের খবর।

    খবর পেয়ে উত্তরায়ন ফাঁড়ির ওসি অমর্ত্য চক্রবর্তী বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মা ও ছেলেকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। সুজিত দাসও স্ত্রী ও ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে অসুস্থ বোধ করেন। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাড়ির পরিচারিকা সুমন্তি মুন্ডার বক্তব্য, ‘আমি রোজ সকাল সাতটায় আসি। আজ ম্যাডামের ছেলের ছুটি ছিল দেখে দশটায় আসতে বলেছিলেন ম্যাডাম। এসে আমি দেখি সব বন্ধ। ঘরে গিয়ে দেখি বেডরুম লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। পরে খবর পাই বাবু আর ম্যাডাম মারা গিয়েছেন। ’

    সুজিতের মেয়ে পড়াশোনার জন্য ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। নতুন বছরের প্রথম দিন বাড়ির লোকের সঙ্গে কাটানোর জন্য বেঙ্গালুরু থেকে বাড়ি এসেছিলেন। বৃহস্পতিবারই তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বুধবার রাতে বর্ষবরণ উপলক্ষে সকলে মিলে খাওয়া দাওয়া করে।কর্মসূত্র বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরেই থাকতেন সুজিত। বুধবার রাতে সকলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেন। এর পর ব্যবসার কাজে সুজিত চলে যান নেপালের দিকে। বাকিরাও খাওয়াদাওয়া সেরে শুয়ে পড়েন।

    প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ঠান্ডায় ঘরের জানালা দরজা বন্ধ রেখে কয়লার উনুন জ্বালানো ছিল ঘর গরম করার জন্য। তা থেকে কোনও ভাবে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড ছড়িয়ে পড়ে ঘরের ভিতর। তার জেরেই শাসকষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় মা ও ছেলের। অসুস্থ হয়ে সংজ্ঞাহীন হন মেয়ে। আবার, খাবারের থেকেও বিষক্রিয়া হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ওই বাড়িতেই থাকতেন মৃত তিথি দাসের ভাগ্নে তন্ময় সরকার। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারের সময়ে ঘরে কোনও ধোঁয়া বা পোড়া গন্ধ ছিল না।’



    তথ্য সহায়তা: রাহুল মজুমদার

  • Link to this news (এই সময়)