নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানির নির্দেশে হরিহরপাড়ার বারুইপাড়া মোড়ে খারিজি মাদ্রাসায় চলত জেহাদি প্রশিক্ষণ। ধৃত জঙ্গি আব্বাস আলি সেই মাদ্রাসায় প্রশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিল। এলাকার নাবালকদের সেখানে এনে খাইয়ে-পরিয়ে ভারত বিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা ছিলই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু সেই মাদ্রাসা চালানোর জন্য সেভাবে অর্থ পেত না সে। সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাদ্রাসার জন্য অর্থ সংগ্রহে নামে আব্বাস। সেই সূত্রেই হরিহরপাড়া থেকে নওদার দুর্লভপুর এসে পরিচয় হয় সাজিবুলের সঙ্গে। সাজিবুল ওই খারিজি মাদ্রাসার জন্য বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে চাঁদা তোলা শুরু করে। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের বাড়িতে যেত। অর্থ না পেলে চাল-ডাল সহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে আসত। আদায়কৃত চাল-ডালে রান্না হতো খারিজি মাদ্রাসা। মাদ্রাসার প্রতি সাজিবুলের দরদ দেখেই আব্বাস তাকে জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগ করার মনস্থির করে। সেইমতো কয়েকদিনের মধ্যেই খারিজি মাদ্রাসায় নিয়মিত যাতায়ত শুরু হয় নওদার সাজিবুলের। সেখানেই তার মগজধোলাই চলে। কিছু পরে শুরু হয় জেহাদি প্রশিক্ষণও। এমনকী, নাশকতা ঘটানোর কলাকৌশলও তাঁকে শেখানো হচ্ছিল। বাধ্য ছেলের মতো সবকিছু শিখে খুব অল্প সময়েই দক্ষ হয়ে উঠেছিল সাজিবুল। সেই সঙ্গে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাই, মাদ্রাসায় অনেকেই জেহাদি প্রশিক্ষণ নিলেও একমাত্র সাজিবুলকে দিয়ে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটনার পরিকল্পনা নিয়েছিল ধৃত জঙ্গি শাদ রবি। তার আগে বেঙ্গল এসটিএফ তাকে গ্রেপ্তার করে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে বেঙ্গল এসটিএফ সোমবার রাতে নওদা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে যতই তদন্তের জাল গোটাচ্ছে, ততই সামনে আসছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দারা আগেই জেনেছেন, আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) শীর্ষ জঙ্গি শাদ রবির পিসতুতো ভাই হয় এই সাজিবুল। তবে শাদের তুলনায় আব্বাসের প্রতি বেশি আনুগত্য ছিল সে। শাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথা হলেও, আব্বাসের নির্দেশ শুনেই চলত সাজিবুল। সাজিবুলের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েকের জন্য সৌদি আরবে কাজে গিয়েছিল সে। সেখান থেকে ছয় লক্ষ টাকা উপার্জন করে গ্রামে পাঠায়। সেই টাকা দিয়েই তার সংসার চলছিল। সাজিবুলের সংসারে তার স্ত্রী-কন্যা ছাড়াও বৃদ্ধা মা রয়েছে। সংসারের জন্য উপার্জিত অর্থ থেকে সে জঙ্গি সংগঠন বিস্তারের কাজে খরচ করে। আব্বাসের মাদ্রাসার জন্য যখন সে গ্রাম থেকে অর্থ আদায় শুরু করে, তখন মাঝেমধ্যে নিজেই ট্যাকের কড়ি খরচ করেছে সেখানে। সেই টাকা আদৌ নিজের উপার্জন করার অর্থ, নাকি জঙ্গি সংগঠনের তরফ থেকে তার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।