• দেদার বালি পাচার নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী
    বর্তমান | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, সিউড়ি: বীরভূম জেলা থেকে ব্যাপক হারে বালি পাচারের অভিযোগ আসায় নবান্ন থেকে প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার তিন থানার ওসি ও আইসির ভূমিকা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। এরপরই বীরভূমের জেলাশাসককে বালি পাচার বন্ধের জন্য ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক শেষ হতেই বীরভূম জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে আলোচনায় বসেন জেলাশাসক। আলোচনার পর বালি পাচার বন্ধ করতে আরও কড়া অভিযান শুরু হতে চলেছে বলে জানান জেলাশাসক।

    বৃহস্পতিবার বছরের শুরুতেই নতুন উদ্যমে কাজ করার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভা সদস্য ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে অন্যান্য জেলার সঙ্গে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় ও জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন। সেখানে আচমকা মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমের জেলাশাসকের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন, তোমার ওখানে তুমি যে গতিতে কাজ শুরু করেছিলে  হঠাৎ এমন কী হল যে বালি সব থেকে বেশি পাচার হচ্ছে! সরকারি রেভিনিউ কেউ নিয়ে চলে যাবে আর তোমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এটা আমি টলারেট করব না। বীরভূমে কিন্তু আমাদের নেতাদের কথায় এটা হচ্ছে না। দুঃখিত, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, ওখান থেকে সমস্ত বিজেপি ফান্ডে টাকা যাচ্ছে। আমি চাই না কোনও পলিটিক্যাল ফান্ডে টাকা যাক। তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম কারও ফান্ডে যাওয়ার দরকার নেই। মানুষের কাজ মানুষ পাবে। তুমি সেখানে তোমার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পার না। ইউ আর দ্য ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। কিছু আইসিও যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে। কী করছে দুবরাজপুর, সিউড়ি, মহম্মদ বাজারের আইসি? তোমরা কি ভাব আমার নলেজে কিছু নেই? আমি এখান থেকে বসে সব খবর রাখি। কাজেই মানুষের জন্য কাজ না করলে আমি তাকে রেয়াত করি না। ভালো করে দেখে নাও, আমি তোমাকে সাতদিনের সময় দিলাম। 

    উল্লেখ্য, মাসখানেক আগে বীরভূমজুড়ে বেআইনি বালিঘাট, বেআইনি বালি মজুত, ওভারলোডিং বন্ধের জন্য মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে লাগাতার অভিযানে নেমেছিল জেলার ভূমি রাজস্ব দপ্তর, জেলা পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। লাগাতার অভিযানে একাধিক বেআইনি বালিঘাট বন্ধ করে দেওয়া, বালির গাড়ি আটক করা, জরিমানা ইত্যাদি চলছিল। তাতে কিছুটা হলেও বালি পাচার কমেছিল বলে প্রশাসনের দাবি। কিন্তু তারপরও এদিন নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। 

    মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পর এদিন দুপুরেই জেলা প্রশাসন এবং পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা মহম্মদ বাজার, সাঁইথিয়া ও সিউড়ির একাধিক বালিঘাটে অভিযান শুরু করেন। সেই অভিযানে একাধিক বালিঘাট থেকে জেসিবি, পকলেন সহ একাধিক মেশিন বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই অভিযান বৈধ বালিঘাটেও চলছে বলে জানা গিয়েছে।

    জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, বালি পাচার বন্ধে আরও পদক্ষেপ করা হবে এটুকুই বলতে পারি। প্রশাসন ও পুলিসের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের আরও সচেতন ও তৎপর হতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।   
  • Link to this news (বর্তমান)